আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সময়মতো হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে বিএনপির মধ্যে। দলটির নেতারা আশঙ্কা করছেন, সরকারের ভেতরেই একটি মহল নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং বিরোধী দলগুলোকে একসঙ্গে করতে নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনায় নেমেছে বিএনপি।
দলটি মনে করছে, নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো পরিষ্কার পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে একটি ‘সেরা নির্বাচন’ আয়োজন করা হবে। তবে বিএনপি বলছে— শুধু কথায় কাজ হবে না। নির্বাচন আয়োজনের আগে যে প্রস্তুতিগুলো নেওয়ার কথা, সেগুলোর কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারে থাকা কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায় বলে তাদের মনে হচ্ছে। এজন্য তারা এখন সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য দিন-তারিখ ঠিক করে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত, কিন্তু সে উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপি চাইছে, যেসব রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তাদের আবারও এক প্ল্যাটফর্মে আনা হোক। যাতে প্রয়োজন হলে সবাই একসঙ্গে রাজপথে নামতে পারে এবং সরকারকে চাপ দেওয়া যায়।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু নেই। নির্বাচন বিষয়ে তিনি সময়সীমার কথা বললেও এখনো দিন নির্ধারণ করেননি বা প্রস্তুতির নির্দেশ দেননি। তাই দলটি এখন নির্বাচনের দাবিতে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সামাজিক মাধ্যমে গত কিছুদিন ধরে একটি প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখা হোক। বিএনপি মনে করছে, এই প্রচারণার সঙ্গে সরকারঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা এটিকে ‘১/১১’র মতো একটি দীর্ঘমেয়াদি বিরাজনীতিকরণের পরিকল্পনা হিসেবে দেখছে।
এমন পরিস্থিতিতে ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিএনপি বিভিন্ন সমমনা দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। আগামী ২১ এপ্রিল বিএনপি লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠকে বসবে। লেবার পার্টির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, সরকার কী ধরনের নির্বাচন করতে চায়, তা নিয়েই মানুষ বিভ্রান্ত। কেউ বলছে সংসদ নির্বাচন, কেউ বলছে গণপরিষদ নির্বাচন—এ ধরনের অস্পষ্টতা সংকট তৈরি করছে।
অন্যদিকে, বিএনপির পুরোনো রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর আমির সম্প্রতি লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে ঢাকায় ফিরে তিনি বলেছেন, জরুরি সংস্কারের পর আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত।
বিএনপির মতে, নির্বাচন যদি ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে না হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তখন দেশে বিরাজনীতিকরণ শুরু হতে পারে। এজন্য দলটি সময়ক্ষেপণের বিরুদ্ধে এখন থেকেই সক্রিয় ভূমিকা নিতে চায়। তাদের মূল লক্ষ্য—নির্বাচনের দাবিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে একমঞ্চে এনে সরকারকে চাপের মুখে ফেলা। সূত্র: বিবিসি