স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি সফর করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ তাদের সঙ্গে আছেন।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তারা এ সফরে যান। উপদেষ্টারা জানান, পাহাড়ে সংঘাতে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রয়োজনে তাদের সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হবে।ওই অঞ্চলে সংঘর্ষে ৪ জন নিহতের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তারা।
উপদেষ্টারা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা সদরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে গণপিটুনিতে এক ব্যক্তিকে হত্যা করায় পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি হওয়ায় ভুক্তভোগীদের উদ্বেগের কথা শোনেন তারা।সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে গ্রাম-ইউনিয়ন-উপজেলা পর্যায়ে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করার কথা বলেন উপদেষ্টারা।
যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে উপদেষ্টারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন এবং এলাকায় কর্মরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে বলা হয়।গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে চুরির অভিযোগে মামুন নামে এক যুবক ‘পিটিয়ে হত্যা’র প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। মিছিলের এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
পরে লারমা স্কয়ারের দোকানপাটে আগুন দেয় একটি পক্ষ। এতে ৬০ থেকে ৭০টি দোকান পুড়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ। সংঘর্ষে সময় আহতদের খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়।দীঘিনালার ওই ঘটনার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পুরো জেলায় আতঙ্ক তৈরি হয়।
নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে গতকাল শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।খাগড়াছড়ির সংঘাতের জেরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে আরেক পার্বত্য শহর রাঙামাটিতেও। সেখানে সংঘর্ষে একজন মারা যান। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। সেখানেও গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর বেলা দেড়টা থেকে রাঙামাটি পৌর এলাকায়ও ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর জনৈক ব্যক্তিকে ‘গণপিটুনি’ ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত এবং ব্যথিত।”খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং পার্বত্য তিন জেলার সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।