রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের তৈরি দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানার অনুমতি দিলে পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে।
এটি সংঘাতের প্রকৃতি এবং পরিধি পরিবর্তন করবে বলে উল্লেখ করেন পুতিন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কি কয়েক মাস ধরে মিত্রদের কাছে পশ্চিমা দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অনুমতি চাচ্ছেন। এসবের মধ্যে মার্কিন আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মস্কোর আক্রমণের ক্ষমতা সীমিত করা যাবে।
পুতিন এখন পর্যন্ত তার করা সবচেয়ে কঠোর মন্তব্যে বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করলে তা সরাসরি যুদ্ধের মধ্যে তাদের টেনে নিয়ে আসবে। কারণ, এসব ক্ষেপণাস্ত্রের স্যাটেলাইট টার্গেটিং ডেটা এবং ফ্লাইট পাথের প্রকৃত প্রোগ্রামিং ন্যাটো সেনাবাহিনীর কর্মীদের করতে হবে যেহেতু কিয়েভের এগুলো পরিচালনার সক্ষমতা নেই।
পুতিন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, এটি কেবল ইউক্রেনীয় শাসনকে রাশিয়ায় আঘাত হানার সুযোগ দেওয়ার প্রশ্ন নয়। এটি ন্যাটো দেশগুলোকে একটি সামরিক সংঘাতে সরাসরি জড়িত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন।
তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানে, ন্যাটো দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে জড়াচ্ছে। এটি তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ হবে এবং এটি অবশ্যই সংঘাতের প্রকৃতি পরিবর্তন করবে।
পুতিন উল্লেখ করেন, রাশিয়া নতুন হুমকি অনুযায়ী ‘উপযুক্ত সিদ্ধান্ত’ নিতে বাধ্য হবে। যদিও তিনি এসব সিদ্ধান্তের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি, তবে অতীতে তিনি পশ্চিমের শত্রুদের রুশ অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার কথা বলেছেন।
এছাড়া, জুন মাসে তিনি পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য কনভেনশনাল ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি হিসেবে রাশিয়া বর্তমানে তার পারমাণবিক নীতিমালা পর্যালোচনা করছে। এই নীতি ঠিক করবে, রাশিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কখন ও কীভাবে ব্যবহার করবে।
এছাড়া, রাশিয়া বর্তমানে চীনের সঙ্গে বড় ধরনের নৌ প্রশিক্ষণ চালাচ্ছে এবং বড় আকারের পণ্য রপ্তানি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় আঘাত করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা করছে, যা তাদের মতে মস্কোর পক্ষ থেকে যুদ্ধ সম্প্রসারণের জবাব হতে পারে।
তারা দাবি করছে, রাশিয়া ইরান থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে। তবে তেহরান এই দাবিকে ‘ঘৃণ্য প্রচার’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে প্রবল সামরিক হামলা চালায়, যা স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাত হয়ে দাঁড়ায়। পুতিন এই সংঘাতকে একটি অস্তিত্বগত লড়াই হিসেবে দেখেন।
পশ্চিম এবং ইউক্রেন এই আক্রমণকে সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের চেষ্টা হিসেবে দেখছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছে।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ১৮ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে।