ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে এক বিশেষ প্রতিরক্ষা সম্মেলনে একত্রিত হচ্ছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপ এখন ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ইউক্রেনের জন্য অর্থ সহায়তা স্থগিত রাখবেন। এই বিষয়টি নিয়েও ইউরোপীয় নেতারা আলোচনা করবেন যে যুক্তরাষ্ট্র যদি সহায়তা বন্ধ করে দেয়, তাহলে আর কীভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করা যায়।
ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্র সরবরাহ করার প্রসঙ্গটিও আজকের আলোচনায় থাকবে। আর এই সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের পর থেকেই ইউরোপজুড়ে উদ্বেগ বেড়েছে। তাই বৃহস্পতিবারের সম্মেলনকে ইউরোপীয় নেতারা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তাদের বক্তব্য থেকেও তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালানোর তিন বছর পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ইতিবাচক মনোভাব ইউরোপের অনেক দেশকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তারা ভাবছে, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর আগের মতো নির্ভর করা যাবে না।
গত বুধবার যখন যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তারপর থেকে ইউরোপের এই উদ্বেগ আরও বেশি বেড়ে গেছে।
চলমান পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফ্রান্স তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের সুরক্ষার ব্যাপারে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
এর আগে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসও পারমাণবিক সুরক্ষা অন্যান্য দেশের সাথে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ইউরোপ স্পষ্ট ভাবেই একটি হুমকির সম্মুখীন। আমাদের জীবদ্দশায় যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অ্যান্তনিও কোস্টা বলেছেন, এটি ইউক্রেন ও ইউরোপিয়ানদের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ইউরোপীয় নেতাদের কাছে লেখা একটি চিঠিতে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন এও বলেছেন, এই মুহূর্তটাকে কাজে লাগাতে হবে এবং আমাদের শিল্প ও উৎপাদনশীল শক্তিকে ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজে লাগাতে হবে।
গত সোমবার উরসুলা ভন ডার লিয়েন ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি নজিরবিহীন প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিআর্ম ইউরোপ’।
তিনি বলেছেন, ইউরোপ এখন প্রতিরক্ষা খাতে ‘ব্যাপকভাবে’ ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত এবং এটি করতে হবে ‘দ্রুত ও প্রয়োজনীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে’।
রিআর্ম ইউরোপ পরিকল্পনায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা রয়েছে, যা ইউক্রেনকে সহায়তা করার পাশাপাশি ইউরোপের প্রতিরক্ষার দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। ভন ডার লিয়েনের মতে, এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা খাতে মোট ৮০০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করার সুযোগ তৈরি হবে।
এই পরিকল্পনা দ্রুত কার্যকর করার পক্ষে অনেক ইউরোপীয় নেতা মত দিয়েছেন। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন যে, কমিশনের পরিকল্পনা একটি মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নওসেদা বলেছেন, এই সম্মেলন থেকে প্রমাণ হয়ে যাবে যে ইউরোপ শুধু কথার ফুলঝুরিই ছড়ায় নাকি আসলেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তবে এখানে রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু ইউরোপীয় নেতার বিরোধিতার সম্ভাবনাও রয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ প্রতিষ্ঠার যে নীতি, তা ‘বাস্তবসম্মত’ নয়। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টকে লেখা এক চিঠিতে দাবি করেছেন, সম্মেলনে কোনো নথিতে লিখিতভাবে ইউক্রেনের নাম না থাকাই উচিত।