গোপালগঞ্জে ননদের স্বামীর মৃত্যুতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে যাওয়া হলো না আমেনা বেগমের। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন। সঙ্গে দুই ভাগ্নি ও শিশু নাতি আইয়াজেরও মৃত্যু হয়। আইয়াজ যে মারা গেছে তা এখনও জানেন না হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবা-মা।
‘তাদের এই অকাল মৃত্যুতে আমরা শোক কাটিয়ে উঠতে পারবো কিনা জানি না।’ দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে বলে কান্নাকাটি করছেন নিহত আমেনা বেগমের বোন জোসনা বেগম। তার দাবি- এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
জোসনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাগ্নি অনামিকা আক্তার ও তার স্বামী সোহান গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা এখনও জানে না, তাদের আদরের সন্তান জীবিত নেই। আয়াজ চিরকালের জন্য চলে গেছে এই পৃথিবী ছেড়ে। এ খবর জানার পর তাদের অবস্থা কি হবে তা বলতে পারছি না।’
তিনি বলেন, অনামিকার অবস্থা গুরুতর। তার হাত ও কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। ওর স্বামী সোহানেরও একই অবস্থা। ওরা তাদের শিশু সন্তানের মৃত্যু শোক কীভাবে সইবে তা বলতে পারছি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন জোসনা বেগম।
অন্যদিকে স্ত্রী, দুই সন্তান ও নাতিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন আমেনা আক্তারের স্বামী ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জে তার ভায়রার মৃত্যর মিলাদের আয়োজনে যাচ্ছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর এক সদস্যের ফোনে দুঃসংবাদ পাই। রাতে আমার শশুর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানের দাফন করা হয়।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের ৪ জনসহ ৬ জন নিহত হয়। এর মধ্যে প্রাইভেটকারে থাকা একই পরিবারের নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের মরদেহ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের নন্দনকোনা গ্রামে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নিহত আমেনা আক্তার, তাঁর দুই মেয়ে ইসরাত জাহান ইমু ও রিহারকে নগরকান্দা গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। এছাড়া আমেনা বেগমের নাতি শিশু আয়াজকে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে দাফন করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ (৭) মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাইভেটকারে থাকা নিহত আয়েজের মা অনামিকা আক্তার, বাবা নূর আলম সোহান, আয়েজের ফুপু ও গাড়ির চালকও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিরাজদীখানের কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মিন্টু জানান, এমন মৃত্যু কখনও মেনে নিতে পারছি না। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। প্রত্যেক ড্রাইভারের ডোপ টেস্ট করা উচিত।
শুক্রবার দুপুরে প্রাইভেটকারে করে রাজধানী জুরাইন থেকে সোহান মিয়া স্ত্রী সন্তানসহ গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের উদ্দেশে মাওয়ামুখী লেন দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে বেপরোয়া একটি যাত্রীবাহী বাস প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাইক আরোহী সুমন মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ (৭) মারা যায়। সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত আরও ৮ জনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সোহান মিয়ার ছেলে আইয়াজ হোসেন, শাশুড়ি আমেনা বেগম, শ্যালিকা ইসরাত জাহান ও রিয়া মনি মারা যান।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম জানান, মাওয়াগামী প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে বেপারী পরিবহনের বেপরোয়া গতির বাসটি প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার এই দুর্ঘটনায় যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।