ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মিরে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে জম্মু-কাশ্মিরের বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়। নির্বাচনে ১৩টি প্রধান দল অংশ নিচ্ছে, যারা ৯০টি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই উপত্যকাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার পর জম্মু-কাশ্মিরে এটিই প্রথম বিধানসভা নির্বাচন।
দীর্ঘ এক দশক পর রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী নির্বাচনের জন্য সাতসকালেই ভোটের লাইনে দাঁড়ান শত শত মানুষ৷ সকাল ৭টা থেকে কাশ্মিরের ১৬টি এবং জম্মুর আটটি বিধানসভা আসনে শুরু হয়েছে নির্বাচন।
প্রথম পর্বের নির্বাচনে দক্ষিণ কাশ্মিরের চার জেলা-পুলওয়ামা, কুলগাম, অনন্তনাগ ও শোপিয়ানের ১৬টি এবং জম্মুর তিন জেলা- ডোডা, কিস্তওয়ার ও রামবনের আটটি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ভোট চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৷
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় ২৬ আসনে এবং এরপর আগামী ১ অক্টোবর তৃতীয় তথা শেষ দফায় ৪০ আসনে ভোটগ্রহণ হবে জম্মু ও কাশ্মিরে। তিন দফার ভোটগ্রহণ শেষে ভোট আগামী ৮ অক্টোবর গণনা হবে।
প্রথম দফায় ২১৯ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে ২৩ লাখেরও বেশি ভোটার। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ভোট দেবেন মোট ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৬৮০ জন ভোটার ৷ তাদের মধ্যে ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ জন পুরুষ৷ আর নারী ভোটার ১১ লাখ ৫১ হাজার ৫৮ জন ৷ এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৬০ জন।
নির্বাচনের মূল প্রতিযোগিতায় রয়েছে পিডিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)। পিডিপির নেতৃত্বে আছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং এনসির নেতৃত্বে আছেন ওমর আবদুল্লাহ। এনসি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে। মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যদিও উপত্যকায় তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জম্মুতে বিজয়ী হয়ে পিডিপির সঙ্গে মিলে বিজেপি সরকার গঠন করেছিল। তবে, ২০১৮ সালে মতানৈক্যের কারণে সেই জোট ভেঙে যায়। এবারের নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার রশিদ, যিনি পাঁচ বছর জেলে কাটানোর পর সন্ত্রাস মামলায় জামিনে মুক্ত হয়েছেন। রশিদ এবছর সাধারণ নির্বাচনে ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়ে চমকপ্রদ জয়লাভ করেন।
কাশ্মিরে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মির থেকে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার৷ এরপর দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায় উপত্যকা৷ তারপর এই প্রথম নির্বাচন জম্মু-কাশ্মিরে।
এদিকে ভোট শুরু হতেই উপত্যকাবাসীদের নির্ভয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ এক্স হ্যান্ডেলে (আগে যার নাম ছিল টুইটার) তিনি লেখেন, ‘জম্মু ও কাশ্মির বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এলাকার সকলকে বিপুল সংখ্যক ভোট দিতে এবং গণতন্ত্রের উৎসবকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানাই। বিশেষ করে তরুণ এবং প্রথমবারের ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
কাশ্মিরে নির্বাচনের ইতিহাস সবসময় বিতর্কিত। এখানকার জনগণ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা নির্বাচন বর্জন করে। কারণ, তারা একে দিল্লির নিয়ন্ত্রণ বৈধ করার প্রয়াস হিসেবে দেখে। ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মিরে ১২টি বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি সবসময় কম ও সহিংসতায় ভরা। এবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারাও কিছু আসনে অংশ নিচ্ছেন, যা ভোটারদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকেই কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করেন না।
গবেষক সুহিল মীর বলেছেন, ‘আমি মনে করি না ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনা হবে। তবে দলগুলো এটিকে ব্যবহার করে ভোটের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’ অন্যরা বলছেন, তারা শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে চান।