দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ পরিবেশক ‘ওজোপাডিকো’তে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও সীমাহীন লুটপাটের বিচার, দলবাজ ও স্বেচ্চাচারী কর্মকর্তাদের অপসারণ, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল, বৈষম্য দূরীকরণ, গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি উঠেছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেছে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (রেজিঃ নং- বি-২১৪০)। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মজিবর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ওজোপাডিকোতে স্বৈরাশাসকের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত দলবাজ ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকর্তাদের অপসারন, ৫ আগষ্টের পূর্বে নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) পদসহ সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ও নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, গত ১৬ বছরের পদোন্নতি ও বেতন স্কেলের বৈষম্য দূরীকরণ, নির্যাতনমূলক শস্তি ও গণবদলী প্রত্যাহার, বিদ্যুৎ খাতের মতো অতিমাত্রায় কারিগরী কোম্পানি সমূহের চেয়ারম্যান/পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী পরিচালক পদে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রথা বাতিল, স্পর্শকাতর স্থাপনা হিসেবে আনসার বাহিনী প্রত্যাহার করে কর্মরত পিসরেট কর্মচারীদের ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে ওজোপাডিকোতে পতিত সরকার কর্তৃক লুটেরাদের স্বার্থে হাতে নেয়া চলমান ও আগাম প্রকল্প সমূহের দুর্নীতি, যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই-বাছাই ও তদন্তে একটি কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করেছেন। তারা আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্প ও কোম্পানির জন্য আত্মঘাতি মনপুরা দ্বীপাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আপগ্রেডেশন প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে ওজোপাডিকো’র সদর দপ্তরে ২০০৭-২০২৪ সময় কর্মকর্তা বৃদ্ধির একটি তুলনামূলক চিত্র উলেখ করে শুধুমাত্র সদর দপ্তরে কর্মকর্তা বৃদ্ধি পেয়েছে ১,২২০%। আর মোট জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে শ্রমিকের চেয়ে কর্মকর্তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৪%। ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৮ জন গ্রাহকের বিপরীতে কারিগরী শ্রমিক আছে ৪৮৫ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩ হাজার ২৪৮ জন গ্রাহককে সেবা দেয়ার জন্য একজন মাত্র শ্রমিক। লোকবলের অভাবে গ্রাহক সেবার মান তলানীতে পৌঁছেছে। গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির জন্য প্রতি ৫ হাজার জন গ্রাহককে একটি ফিডার ধরে প্রতি ফিডারে ১২ জন করে কারিগরী শ্রমিক নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন। এসডিজি ও আইএলও এজেন্ডা অনুযায়ী শোভন কাজ পরিপন্থী আউট সোসিং প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ ওয়ার্কারস প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডের (ডচচঋ) ১৬ কোটি ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫০ টাকা সমহারে বন্টন, কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি ক্রয়ের জন্য সুদ মুক্ত লোন বাতিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকের মতো সকলের চাকুরি থেকে অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ এবং প্রতি ৫ বছর পর পর চাকুরি নবায়নের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক নিয়ম বাতিল করে চাকুরিবিধি সংশোধন ও আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মোঃ আযম সরোয়ার, শেখ মোঃ আলীম, মোঃ হুমায়ুন কবির, মোঃ মাহমুদুল হক, শেখ মোঃ আলমগীর হোসেন, মোঃ কবির হোসেন ফরাজী, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ সালাম, কাজী আলী আহসান সানী ও মোঃ আলী হোসেন প্রমুখ।