দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর মৃত্যু ও সংক্রমণে শীর্ষে উঠে এসেছিল ‘রাজশাহী’। করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টে একদিনে সর্বোচ্চ ২২ জন পর্যন্ত মৃত্যু ঘটে এখানে।
এবার করোনার তৃতীয় ঢেও শুরুতে আবারও উচ্চ ঝুঁকিতে পড়েছে এই বিভাগীয় শহর। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ।
রাজশাহীতে ওমিক্রন শনাক্তের কোনো সুযোগ না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে- এটি নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবেই হচ্ছে। দেশে ওমিক্রন প্রভাব বিস্তার করলেও রাজশাহীতে থাকা দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের কোনো সুযোগ নেই। ফলে করোনা পজিটিভ শনাক্তকৃতরা ওমিক্রন আক্রান্ত কিনা, তা নিশ্চিত হতে পারছেন না, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তাই রাজশাহীর সন্দেহভাজন নমুনাগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানানো হয়েছে।
এরই মধ্যে নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। করোনার মরণঘাতী ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেই হাজির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’। এজন্য আবারও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে রাজশাহীতে।
সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং চিকিৎসা সংকট গত বছর থেকেও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপরও সাধারণ মানুষ মাস্ক পড়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন। তাই রাজশাহী বিভাগে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে ডেল্টা ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। সকালে রামেক হাসপাতালের দৈনন্দিন প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যানুযায়ী- সর্বশেষ গতকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাজশাহীতে থাকা দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাবে মোট ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং তারা সবাই রাজশাহী জেলার অধিবাসী। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে বর্তমানে রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা আগের সপ্তাহের সংক্রমণের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি!
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গেল ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত হয়ে বা করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। করোনা ইউনিটে থাকা ১০৪ শয্যার বিপরীতে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার ১৮ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬ জন, নওগাঁর ৩ জন, নাটোরের একজন এবং পাবনার ২ জন রোগী রয়েছেন। এই ৩০ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী আছেন ১৬ জন। উপসর্গ রয়েছে ৮ জনের। এছাড়া করোনা শনাক্ত হয়নি এমন রোগী আছেন ৬ জন।
এদিকে, সোমবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুনভাবে ৪১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই দিনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে ১০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুনভাবে শনাক্ত হওয়ার ৪২ জন করোনা রোগীর প্রত্যেকেই রাজশাহীর অধিবাসী। পরীক্ষার অনুপাতে জেলায় করোনা শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাবেরা-গুল-নাহার বলেন, রাজশাহীতে এখনও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্তের সুযোগ নেই। আরটি-পিসিআর ল্যাবে কেবল করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তাই করোনা পজিটিভ শনাক্তকৃতরা ওমিক্রন আক্রান্ত কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। না। সারা দেশের মধ্যে একমাত্র ঢাকার জাতীয় রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে (আইইডিসিআর) রেনডোমাইজ ফ্রিকুয়েন্স করে ওমিক্রন শনাক্ত করা হচ্ছে।
এজন্য রাজশাহীর কিছু নমুনা সেখানে নিয়মিতভাবে পাঠানো হবে।
এই প্রক্রিয়া কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে বলেও জানান রামেক ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান।
এদিকে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যানুযায়ী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে, বিভাগে আজকেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) নাজমা আক্তার জানান, হঠাৎই সংক্রমণ বাড়ছে। আর বিভাগের আট জেলার মধ্যে রাজশাহী জেলাতেই করোনার সংক্রমণ বেশি। এরই মধ্যে রাজশাহী ও নাটোর জেলাকে হলুদ জোনের (মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ) আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ায় বিভাগের অন্য জেলাতেও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এ সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
পিএসএন/এমআই