সরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। শুক্রবার জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিল এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কিরিলো বুদানভ রাশিয়ার বিশেষ বাহিনীর টেলিগ্রাম অ্যাপে নজরদারি করার ক্ষমতা সম্পর্কিত প্রমাণ উপস্থাপন করার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।গণমাধ্যমের তথ্য মতে, এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। টেলিগ্রাম অ্যাপটি ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশেই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালানোর পর এটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হয়ে ওঠে।
নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং সামরিক কমান্ডার ও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা নিয়মিত টেলিগ্রামে যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তবে যেসব কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য টেলিগ্রাম ব্যবহার করেন তারা এই নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতার বাহিরে থাকবেন।দুবাইভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাশিয়ান বংশোদ্ভূত পাভেল দুরভ। ‘ভিকনটাক্ট’ নামে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফরম ছিল। তার এই প্ল্যাটফরমের বিরোধী সম্প্রদায়গুলো বন্ধ করার দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তিনি ২০১৪ সালে রাশিয়া ত্যাগ করেন। যদিও পরে তিনি প্ল্যাটফরমটি বিক্রি করে দেন।
প্ল্যাটফরমে অবৈধ কন্টেন্ট প্রকাশ করার অভিযোগে গত মাসে ফ্রান্সে পাভেল দুরভকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য রাশিয়া প্রস্তুত ছিল : পুতিনইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কিরিলো বুদানভ রাশিয়ার বিশেষ সেবাগুলো কিভাবে টেলিগ্রামের বার্তা, এমনকি মুছে ফেলা বার্তাও অ্যাকসেস করতে পারে এবং ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, সেই সংক্রান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেন।বুদানভ তার নিজস্ব বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি সব সময় মুক্ত বাকস্বাধীনতার সমর্থক ছিলাম এবং থাকব। তবে টেলিগ্রামের বিষয়টি বাকস্বাধীনতার নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়।’
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর টেলিগ্রাম একটি বিবৃতি দিয়ে জানায় ‘টেলিগ্রাম কখনোই কোনো মেসেজিং তথ্য কোনো দেশে সরবরাহ করেনি।এমনকি রাশিয়ায়ও না। মুছে ফেলা বার্তাগুলো চিরতরে মুছে যায় এবং তা পুনরুদ্ধার করা প্রযুক্তিগতভাবে অসম্ভব।’তারা আরো জানায়, ‘ফাঁস হওয়া বার্তার’ প্রতিটি ঘটনাই প্রমাণিত হয়েছে যে সেটি কোনো ডিভাইসের নিজস্ব ত্রুটির কারণে বা ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে।টেলেমেট্রিও ডাটাবেইস অনুসারে, ইউক্রেনে প্রায় ৩৩ হাজার টেলিগ্রাম চ্যানেল সক্রিয় রয়েছে। ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমের অনুমান অনুযায়ী, গত বছরের শেষ পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ ইউক্রেনীয়রা এই অ্যাপটি যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করেন এবং ৭২ শতাংশ এটিকে প্রধান তথ্যের উৎস হিসেবে দেখেন।