রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বুধবার (১৯ মে) দুপুরে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। ফুসফুসের কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তারপর ফুসফুসের পানি বের করার জন্য বুকের দুটি পাইপের মধ্যে বাম পাশেরটি খুলে দেয়।
আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের সূত্র দিয়ে গণমাধ্যমে এমন খবর আসলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বিএনপির দফতরে।
গত ১০ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গুলশানের বাসা ফিরোজায় ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের অধীনে চিকিৎসাধীন থাকার পর তাদের পরামর্শে ২৭ এপ্রিল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন খালেদা জিয়া। গত ৩ মে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। পোস্ট কোভিড জটিলতায় খালেদা জিয়ার পুরনো রোগ আর্থাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি হৃদযন্ত্র ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলছে।
খবরে প্রকাশ, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খুব ধীরে উন্নতি ঘটছে। তবে তার বয়স ও অন্যান্য জটিল রোগের কারণে শঙ্কা এখনও কাটেনি। তার ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে তারা চিন্তিত। শরীরে প্রোটিনের অভাব এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চিকিৎসায় ধীরে এগুতে হচ্ছে।
ফুসফুসে জমা পানি বের করার জন্য খালেদা জিয়ার বুকের দুই পাশে দুটি পাইপ বসানো হয়েছিল। ফুসফুসে পানি জমাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হওয়ায় তারা আপাতত বাম পাশের পাইপটি খুলে নিয়েছেন। এখন তারা পর্যবেক্ষণ করবেন, আদৌ আর পানি জমা হয় কি-না। এটার ওপর নির্ভর করে অপর পাইপটিও তারা খুলে ফেলবেন।
দীর্ঘ ২৩ দিন ধরে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে চিন্তার ছাপ পড়েছে। খুব ধীরে সুস্থ হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি চলে আসছিল। কিন্তু এখন অনেকটা আশঙ্কামুক্ত। খালেদা জিয়ার হার্টের সমস্যা দূর করা নিয়ে তাদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া ইনস্যুলিন দিয়ে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে কোভিড সংক্রান্ত জটিলতার পাশাপাশি পুরনো রোগে কাবু হয়ে পড়ছেন খালেদা জিয়া। তার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। খালেদা জিয়া সামান্য কিছু তরল খাবার যেমন স্যুপ, পেপের জুস ও জাও (তরল ভাত) খেতে পারলেও অন্যান্য খাবার খেতে পারছেন না।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বুধবার রাতে তার চিকিৎসক দলের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সামনে রোগী আছে আমি কথা বলতে পারবো না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়ার শারীরের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তিনি এখনো কোনো তথ্য পাননি।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ গণমাধ্যমকর্মীদের ফোন রিসিভ করছেন না। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা অবধি বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘ম্যাডামের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’
এদিকে বুধবার বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কল দিয়ে এবং খুদেবার্তা পাঠিয়েও খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলামের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।