ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে খুলনার বিপণিবিতান ও বাজারগুলোতে কেনাকাটার ধুম লেগেছে। ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি থাকায় ক্রেতারা দৌড়ঝাঁপ করছেন নতুন পোশাক, জুতা, গহনা, প্রসাধনী, শিশুদের পণ্য, নামাজের সামগ্রী, স্কিন কেয়ার পণ্যসহ নানান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। শহরের সব মার্কেটেই বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। খুলনা শহরের প্রায় সব বাজারেই উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে, যেখানে হাঁটাচলা করাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ক্রেতারা আগ্রহভরে তাদের পছন্দের জিনিসপত্র কিনছেন। অনেকেই ইতোমধ্যেই তাদের কেনাকাটা সম্পন্ন করেছেন, তবে যারা এখনও কেনাকাটা করেননি, তারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। দোকান থেকে দোকান ঘুরে, দরদাম করে, বাজেট অনুযায়ী পছন্দের পণ্য কিনতে ব্যস্ত সবাই। ঈদের মাত্র একদিন আগে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় বাজারগুলো ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) খুলনার নিউ মার্কেট, ডাকবাংলো ও আশপাশের বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকানের পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানেও প্রচুর ভিড়। সরকারি অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারের ভিড় আরও বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। শহরের খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, নিক্সন মার্কেট, বড়বাজার, নিউ মার্কেট, জলিল টাওয়ার, ডাকবাংলো সুপার মার্কেট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণি বিতান, সেফ অ্যান্ড সেভ, কেডিএ অ্যাভিনিউ মার্কেট, দরবেশ চেম্বার, ইশা চেম্বার, সম্রাট বাজার, এপেক্স গ্যালারি, দৌলতপুরের মোর্ত্তজা ম্যানশন, খালিশপুর সুপার মার্কেট, ফুলবাড়িগেট বাজার মার্কেট ও শিরোমনি বৈশাখী সুপার মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। দৌলতপুর মার্কেটের বাটা শুজে’র মালিক আলভি রহমান বলেন, “এখন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা চলছে। কেউ নিজে কেনাকাটা করছেন, আবার কেউ শিশুদের জন্য কেনাকাটা করছেন। তবে ভিড়ের কমার কোনো লক্ষণ নেই।” ডাকবাংলো, যা খুলনার অন্যতম ব্যস্ততম মার্কেট, সেখানে প্রায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। কেউ দরদাম করছেন, কেউ কেনাকাটা শেষ করে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন। নিউ মার্কেটের ‘সুতপা কালেকশন’-এর মালিক রফিকুল আলম বলেন, “আমাদের এখানে পুরুষদের শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট ও ফতুয়া পাওয়া যায়। ঈদ আর মাত্র একদিন বাকি। অনেকেই তাদের কেনাকাটা শেষ করেছেন, তবে সন্ধ্যা ও রাতে আবারও ভিড় বাড়তে পারে। আমাদের বাজারের দাম তুলনামূলক কম, তাই সব শ্রেণির মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে পারেন।” কোনো সুযোগ না পেয়ে শেষ মুহূর্তে ঈদের কেনাকাটায় আসা আনিসুল ইসলাম তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে নিউ মার্কেটে এসেছেন। তিনি জানান, ছোট মেয়ের জন্য ১২০০ টাকায় একটি টি-শার্ট সেট কিনেছেন, কিন্তু এখনও তার জন্য জুতা কেনা বাকি। ছেলের জন্য একটি শার্ট ও প্যান্ট কেনার পরিকল্পনা করেছেন এবং ভালো দামে কেনার জন্য বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখছেন। তিনি বলেন, “স্ত্রীর জন্য তিন পিস, বোরকা এবং জুতা কিনেছি। ছেলেমেয়েদের জন্য কেনাকাটা শেষে নিজের জন্য একটি শার্ট, প্যান্ট ও একটি সুতি পাঞ্জাবি কিনব।” শুধু পোশাক, জুতা, গহনা ও প্রসাধনী নয়, শিশুদের খেলনার দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। মার্কেটের তুলনায় ফুটপাথের দোকানে দাম কিছুটা কম হওয়ায় অনেকেই সেখানে কেনাকাটা করছেন। নিক্সন মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা সাজিব হোসেন বলেন, “এখানকার দাম তুলনামূলক কম। প্রায় সব ধরনের পণ্য এক জায়গায় পাওয়া যায়। তবে শেষ মুহূর্তের ভিড় এত বেশি যে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।” খালিশপুর থেকে ডাকবাংলোতে কেনাকাটা করতে আসা নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমি ভেবেছিলাম শেষ মুহূর্তে ভিড় একটু কম থাকবে, কিন্তু এসে দেখি হাঁটারও জায়গা নেই! পুরো পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি, আশা করি ভালো কিছু পেয়ে যাব।” যদিও ক্রেতারা প্রচণ্ড ভিড়ে কিছুটা বিরক্ত, তবে বিক্রেতারা বেশ খুশি। তারা জানান, রমজান মাসের শুরু থেকেই ভালো বিক্রি হয়েছে, আর এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে অনেক পণ্য কম লাভে বিক্রি করা হচ্ছে এবং বিশেষ ঈদ অফারও দেওয়া হচ্ছে। ঈদের রাত পর্যন্ত ভালো বিক্রি হবে বলে বিক্রেতারা আশা করছেন।
সিনিয়র এডিটর
Leave a comment
সর্বশেষ
- Advertisement -


