সাকিবুর রহমান
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে খুলনা শহরের বাজারগুলোতে জমজমাট কেনাকাটা শুরু হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি থাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মার্কেটে উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
নিক্সন মার্কেট, খাজা খানজাহান আলী মার্কেট, ক্লে রোড, বড় বাজার, সোনাডাঙ্গা শপিং সেন্টার ও কেডিএ নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দোকানিরা জানিয়েছেন, ১৫তম রোজার পর থেকে বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। বড় বাজারের কুষ্টিয়া বস্ত্রালয়ের মালিক আয়ুব আলী জানান, ‘স্থানীয়ভাবে তৈরি থ্রিপিস ও শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এবার তরুণীদের মধ্যে দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাক যেমন বাড়ি, লাকি, রূপকথা, আলিকদর, পাকিজা, জমজম, বলামকারি, থ্রি-ডি এবং ফেরদৌস-এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব পোশাকের দাম ৫৫০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকার মধ্যে রয়েছে’।
তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল ও জামদানি শাড়ির পাশাপাশি ডিজিটাল প্রিন্ট শাড়িও ঈদ বাজারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বড় বাজারের বারিক ক্লথ স্টোরের মো. মামুনুর রশিদ জানান, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের বেশিরভাগই প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড় ও দেশীয় তৈরি থ্রি-পিস কিনছেন। কেডিএ নিউ মার্কেটের পাবনা স্টোরের মালিক আমিরুল ইসলাম আলিফ বলেন, ‘রমজানের ২০ তারিখের পর বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে দৈনিক লেনদেন ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা থাকলেও, তখন তা বেড়ে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে’। এবার তরুণীদের মধ্যে পাকিস্তানি থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি। আগা নুর, বিন সাইদ, বিন হামিদসহ আরও অনেক ড্রেস জনপ্রিয় এবার। এর মধ্যে ‘মলহার কটন’ ১,৫০০-২,৫০০ টাকা, ‘নূর শিপন’ ৪,৫০০-৭,৫০০ টাকা, ‘শিপন তাওয়াক্কাল’ ৩,৫০০-৭,৫০০ টাকা, এবং ‘লুন’ ১,৫০০-২,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নারীদের মধ্যে ভারতীয় খাদি জর্জেট শাড়ি ৬,০০০-১২,০০০ টাকা, সফট বেনারসি কাতান ৫,৫০০-৬,৫০০ টাকা, ভারতীয় জামদানি ৩,২০০-৪,৫০০ টাকা, দক্ষিণ ভারতীয় অর্গানজা শিপন ৪,০০০-৬,৫০০ টাকা, রাজস্থানি জয়পুরি সিল্ক ২,৫০০-৪,৫০০ টাকা, সিলেটের মণিপুরি শাড়ি ২,০০০-২,২০০ টাকা, গাদোয়াল সিল্ক ১২,০০০-১৩,০০০ টাকা, টাঙ্গাইল সফট সিল্ক ৩,০০০-১০,০০০ টাকা, এবং সিরাজগঞ্জের বেলকুচি শাড়ি ২,৫০০-৪,৫০০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আলিফ।পুরুষদের মধ্যে দফ, দাপিক, এবং টমি জিন্স ব্র্যান্ডের জিন্স ৯৫০-৩,২০০ টাকা জনপ্রিয়। এছাড়া ‘শেখ শাদী’, ‘স্টার’ ও ‘টপ টেন’ ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি ৬০০-২,৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম থাকায় ঈদ কেনাকাটা অনেকটাই সাশ্রয়ী হয়েছে। এদিকে, শহরের ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসে গেছে, যেখানে কম দামে ফ্যাশনেবল পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ঈদ বাজারে ভিন্নধর্মী কেনাকাটার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ক্রেতারা তাইওয়ান ও থাইল্যান্ডের পোশাক, জুতা, কসমেটিকস ও শিশুদের পোশাকের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যদিও সুতি, টিস্যু, সিল্ক ও সিনথেটিক কাপড়ের দামে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় কমেনি।