রেস্তোরাঁয় এসে আমরা সাধারণত মুঠোফোন স্ক্রল করি তার ফাঁকে আমরা খাবারের স্বাদ নিই। এমনটাই এখনকার সময়ের বাস্তবতা কিন্তু এই রেস্তোরাঁয় নেই ওয়াই-ফাই। এর পরিবেশটাই এমন যে আপনি মুঠোফোনের নোটিফিকেশনে চোখ রাখার চাইতে এর নান্দনিক পরিবেশে আটকে যাবেন। খুলনার মুজগুন্নি পার্কসংলগ্ন আর্ট ইয়ার্ড তেমনই একটি ক্যাফে।

আজকাল শহরজুড়েই নামে-বেনামে অসংখ্য রেস্তোরাঁর নামফলক দেখি। ক্যাফেও তার একটি অনুষঙ্গ। আমরা সাধারণত ক্যাফেতে যাই কফিসহ বিভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ নিতে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্যাফেতেই প্রযুক্তির বদৌলতে আমরা মুঠোফোন স্ক্রল করি আর সেই ফাঁকে কফিতে চুমুক দিই। সেই আড্ডা দেওয়ার পরিবেশটা আর পেয়ে উঠিনা আমরা ব্যস্ত শহরের বেশিরভাগ ক্যাফেতেই।
মহিনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের ‘আমার প্রিয়া ক্যাফে’ নামে ৭০ দশকের সাড়া জাগানো একটি গান আছে। প্রিয়তমার সাথে এক কাপ কফি উইথ ‘প্রিয়া ক্যাফে’। আদতে আমাদের নগরজীবনের এই ব্যস্ততার ফাঁকে হয়তো আমরা সেরকমই কোনো জায়গা খুঁজি যেখানে সেই প্রিয়া ক্যাফেতে প্রিয়জনকে নিয়ে স্মৃতিরোমন্থণ করা যায়।

এরকম ক্যাফে কালচার বেশিরভাগ দেখা যায় ইউরোপে। সেখানে মানুষ শুধু রেস্তোরাঁয় খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনা বরং সময়টা উপভোগ করে। ভিয়েনার ক্লাসিক ক্যাফে থেকে শুরু করে প্যারিসের রাস্তাঘেঁষা টেবিল কিংবা রোমের ব্যস্ত এসপ্রেসো বার— প্রতিটিই একেকটি জীবন্ত মঞ্চ, যেখানে সাহিত্য, রাজনীতি, প্রেম আর দার্শনিক চিন্তা একে অপরের সঙ্গে মিশে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এক কাপ কফির পাশে বসে থাকা এই সংস্কৃতির এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ক্যাফে গুলো যেন শহরের হৃৎস্পন্দন, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ওঠে নতুন গল্প, সম্পর্ক আর অভিজ্ঞতা। ইউরোপে ক্যাফে মানে কেবল সময় কাটানোর শৈল্পিক স্থান।
খুলনায় সেই ইউরোপীয় ক্যাফে কালচারের আদলে গড়ে ওঠা একটি রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। আর্ট ইয়ার্ড ক্যাফে খুলনার মূল শহর থেকে একটু দূরে বয়রার মুজগুন্নী পার্কের পার্শ্বে। চমৎকার নিরিবিলি খোলামেলা একইসাথে নান্দনিক ডিজাইনের এ ক্যাফেতে যে কারো মন ভালো হয়ে যাওয়ার সব উপকরণই আছে। ওয়াল জুড়ে দারুন সব হাতে আঁকা ছবি সেই সাথে পুরো রেস্তোরাই যেন এক আস্ত লাইব্রেরী। আছে বইয়ের তাক আর সেখানে সারি সারি বই। চোখে পড়বে একটি বিলিয়ার্ড বোর্ডও। যা এই আর্ট স্পেসের ভিন্নতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার রেস্তোরাঁটির মালিক নিজেরাই আর্কিটেক্ট। নিজেরা শিল্পের গুরুত্ব বুঝে বলেই হয়তো অন্যদের শিল্পের কদর করার এক অনন্য প্রয়াস চালু রেখেছে তারা। এখানে যে কেউ নিজেদের আঁকা ছবি, তোলা ছবি কিংবা যেকোনো শিল্পকর্ম যার শৈল্পিক ভ্যালু আছে সেটা কিনে থাকে। কতৃপক্ষ অবশ্য ভবিষ্যতে এখানে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে যা বিরলই বটে অন্তত খুলনায়। হতে পারে অচিরেই এটি রেস্তোরাঁর পাশাপাশি একটি চমৎকার মিনি আর্ট হাবে পরিণত হবে।

এবার আসা যাক আর্ট ইয়ার্ডের দারুন সব খাবারে। চাইনিজ সব খাবারই এখানে পাওয়া যায়। ফিশ বারবিকিউ, চাইনিজ বারবিকিউ আর সেই সাথে, আরাবিয়ান, ইন্ডিয়ান ও ফাস্ট ফুডসহ নানা ধরনের খাবারই মেনুতে পাবেন। ইন-হাউস বারবিকিউ ও চাইনিজ আইটেমগুলো ক্রেতাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।









‘আর্টইয়ার্ড’ সেমিনার, আড্ডা ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি করপোরেট ও ব্যক্তিগত আয়োজনে্র জন্যেও দারুন জায়গা।
খাবারপ্রেমীদের জন্যই বা বরং ‘আর্ট ইয়ার্ড’শিল্পকে ভালোবাসা এবং ধারণ করা সবার জন্যই নিশ্চিন্তে যাওয়ার মতই একটি ক্যাফে। শহরের যান্ত্রিক জীবনে এমন প্রশান্তিময় আর শৈল্পিক জায়গা পাওয়া যেমন দুর্লভ, তেমনি উপভোগ্য।