বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাস, যা সাধারণভাবে ‘মধুমাস’ নামে পরিচিত, শুরু হতে আর মাত্র ছয় দিন বাকি থাকলেও খুলনা শহরসহ আশপাশের বাজারগুলোতে আম ও লিচুর সরবরাহ শুরু হয়ে গেছে।
খুলনার ফলের দোকানগুলোতে এখন জমজমাট গ্রীষ্মের সুস্বাদু ফল। বিশেষ করে সাতক্ষীরার আম এবং যশোর, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের লিচু ক্রেতাদের নজর কাড়ছে।
এবার আম ও লিচুর বাম্পার ফলনের কারণে খুলনার বাজারে এই ফলগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
বুধবার খুলনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ‘গোপালভোগ’ আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, ‘গোবিন্দভোগ’ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় এবং আগাম ‘হিমসাগর’ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
শহরের বিভিন্ন অস্থায়ী বাজার ও দোকানগুলোতে ক্রেতারা আম ও লিচু কিনতে ভিড় করছেন।
ফল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত বছর এই আমগুলো ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন তারা।
এদিকে, বোম্বাই, বেদানা ও চায়না-৩ জাতের লিচুও পাওয়া যাচ্ছে সুলভ মূল্যে।
ঋতুকালীন ফল বিক্রির জন্য খুলনার বড়বাজার, ক্লে রোড, কেসিসির সন্ধ্যা বাজার, ডাকবাংলা, পিকচার প্যালেস মোড়, ময়লাপোতা মোড়, পশ্চিম মকবুল রোড, গল্লামারি, রূপসা বাজার, ভৈরব স্ট্যান্ড রোড, কালীবাড়ি রোড, কেডি ঘোষ রোড, নিউ মার্কেট, খালিশপুর ও দৌলতপুর কিচেন মার্কেটে অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে।
কেসিসির সন্ধ্যা বাজারের ফল বিক্রেতা কাজী মহিউদ্দিন জানান, সাতক্ষীরার গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ ও হিমসাগর আম যথাক্রমে ৭০-৮০ টাকা, ৯০-১০০ টাকা ও ১১০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও যশোর থেকে লিচু প্রতিদিনই আসছে বাজারে।
তিনি জানান, বোম্বাই লিচুর প্রতি ১০০টি গুচ্ছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৪০ টাকায়, বেদানা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় এবং চায়না-৩ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩২০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, এখন সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি, তবে কয়েকদিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমে আসবে।
ক্লে রোডের ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া বলেন, বেশি লাভের আশায় কিছু কৃষক অপরিপক্ব লিচু তুলে নিচ্ছেন।
একজন গ্রাহক, ছাপাখানার কর্মচারী শহিদুল জানান, আম ও লিচুর দাম নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।
আরেক ক্রেতা আবদুল হামিদ বলেন, “গত বছরের তুলনায় দাম ভালো। ফলের মজুদ বেশি থাকায় দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। আশা করি, এমন দামই থাকবে।”
ক্রেতারা ফল পচা রোধে ক্ষতিকর রাসায়নিক, বিশেষ করে ফরমালিন ব্যবহার রোধে প্রশাসনের নজরদারি জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।
খুলনা ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ফরমালিনযুক্ত ফল শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, গ্যাস্ট্রিক এমনকি ক্যানসারের মতো রোগ সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট ও মনিটরিং টিম নিয়মিত অভিযান চালালে বিক্রেতারা ফরমালিনমুক্ত ফল বিক্রি করতে উৎসাহিত হবেন।
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলে এবার আম উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদনের আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৮৬৩.৩১ কোটি টাকা।
ডিএই জানায়, খুলনার সাতক্ষীরা, নড়াইল, বাগেরহাট ও খুলনা জেলায় এবার প্রায় ৭,৮৯০ হেক্টর জমিতে ১,০৭,৯১৪ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে, প্রতি হেক্টরে গড়ে ১৩.৬৭ টন।
ডিএই খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই উৎপাদন খুলনা অঞ্চলের অর্থনীতিকে বড় অবদান রাখবে এবং অঞ্চলটিকে দেশের অন্যতম উদীয়মান আম উৎপাদনকারী অঞ্চলে পরিণত করবে।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ, যা দেশের অন্য কোথাও চাষ হয় না, এবং ল্যাংড়া ও হিমসাগর (রাজশাহীতে ‘খিরসা’ নামে পরিচিত) আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন।
তিনি আরও জানান, অঞ্চলটিতে বারি-৩, বারি-৪, আম্রপালি, লতা বোম্বাই, কাটিমনসহ আরও কিছু জনপ্রিয় জাতের আমও চাষ হয়েছে।
বিশেষ করে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় উৎপাদিত গোলাপজাম জাতের আম দেশে এবং বিদেশে চাহিদাসম্পন্ন।