সাকিবুর রহমান
উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্যে ৬৬ বছর পুরনো খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিল এলাকার ৪৭ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠবে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির কারখানা। নামকরণ করা হয়েছে ‘একটিভ ফার্মাসিউটিকাল ইনগ্রেডেন্টিন এন্ড স্টার্চ’।
বিসিআইসি-র পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন বাসস-কে জানান, “বন্ধ খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের প্রায় ৪৭ একর জমিতে এ কারখানা নির্মিত হবে, যার প্রস্তাবিত ব্যয় ৩,৩৮২ কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে”।
৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান হবে নতুন এ কারখানা। বিসিআইসির তত্তাবধায়নে পরিচালিত হবে নতুন কারখানা। সংবাদপত্র ও পাঠ্যপুস্তকের প্রয়োজনে ১৯৫৯ সালে ৮৭ একর জমির ওপর এই নিউটপ্রিন্ট মিল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তবে ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০২ সালের নভেম্বরে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় এখানে ৬ হাজার ৫শ’ শ্রমিক কর্মরত ছিল। পরে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়।
“প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) পদ্ধতিতে নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-কে চিঠি পাঠানো হয়েছে,” তিনি জানান, “অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।”
সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর উৎপাদন কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জার্মানি, সুইডেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে আমদানি করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
লোকসান এড়িয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিসিআইসি মিলের জমিতে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি কারখানার করার উদ্যোগ নেয়। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ব্যয়ের সমুদয় অর্থ দিতেও রাজি হয়েছে। ওয়াসো ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসাল্টটেন্ট (বিডি) লিমিটেডকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকের (ECNEC) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিমত, আগামী অর্থ বছরে এ প্রকল্পের অর্থ ছাড় দেওয়া হবে। জার্মান, সুইডেন ও ইউরোপ থেকে এ কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানী করা হবে।
খালিশপুরের এ নতুন প্রকল্পে চৌদ্দটি ওষুধের কাঁচামাল তৈরি হবে। ওষুধের কাঁচামাল তৈরির উল্লেখযোগ্য রসদগুলো হচ্ছে, প্যান্টোপ্রাজল-সোডিয়াম/রাবেপ্রাজল, ফ্লুকোনাজল, অ্যাটোরভাস্ট্যাটিন ক্যালসিয়াম, ফেক্সোফেনাডিন হাইড্রোক্লোরাইড, মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড, ভিল্ডাগ্লিপটিন, প্যারাসিটামল, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামলোডিপাইন। দেশের ওষুধ শিল্পের প্রয়োজনে ৯০ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। এটি চালু হলে আগামিতে ওষুধের কাঁচামাল আমদানির হার কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
মন্ত্রণালয়ের তৈরি এ প্রকল্পে বলা হয়েছে, দেশের মাত্র ৩ শতাংশ চাহিদা পূরণকারী খুব কম ইউনিট থাকায় অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্টস-এপিআই কমপ্লেক্স তৈরি করা, দেশের ঘাটতি কমানোর জন্য এবং সামগ্রিকভাবে দেশের ওষুধ শিল্পকে সহজতর করার জন্য কর্ন স্টার্চ কারখানা তৈরি করা, বিসিআইসি’র অধীনে এপিআই এবং স্টার্চ একসাথে উৎপাদন করা, যা দেশের একটি নতুন রাসায়নিক শাখা হিসেবে গবেষণা ও উন্নয়ন সহজতর করে এবং এপিআই পণ্য আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে, দেশে উপজাত স্টার্চের গুণমান এবং পরিমাণ সহজতর করবে।
২০০২ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকা কেএনএম প্রাঙ্গণে নতুন উৎপাদন লাইন স্থাপন করা এবং এর ফলে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি করা সেই সাথে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের বাজার তৈরি করা। এ কারখানা চালু হলে ৩৫০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে। নতুন কর্মস্থানের সৃষ্টি হবে। দেশে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির কারখানা হওয়ায় এ শিল্প সমৃদ্ধ হবে। এর পক্ষে জনমত গড়ে উঠবে। খুলনার খালিশপুর আবার শিল্পে সমৃদ্ধ হবে।
উল্লেখ্য, ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন প্রদানের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। ২০০৫ সালে, কারখানাটির ১৩ একর জমি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনকে ইজারা দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে, বাংলাদেশ সরকার খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস লিমিটেডের জায়গায় একটি পাওয়ার প্লান্ট এবং একটি নতুন কাগজ কল তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডকে ৭৫০-৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করার জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আগামী অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইউরোপ থেকে আমদানি করা হবে।”
উৎপাদিত কাঁচামালের মধ্যে থাকবে প্যানটোপ্রাজল সোডিয়াম, রাবিপ্রাজল, ফ্লুকোনাজল, অ্যাটোরভাস্টাটিন ক্যালসিয়াম, ফেক্সোফেনাডিন হাইড্রোক্লোরাইড, মেটফর্মিন হাইড্রোক্লোরাইড, ভিলডাগ্লিপটিন, প্যারাসিটামল, অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও অ্যামলোডিপিন ইত্যাদি।