পুলিশে এত দিন আলোচনায় ছিল কে হচ্ছেন পুলিশ প্রধান এবং র্যাবের প্রধান হিসেবে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকার দুটি পদে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার পর এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় কে আসছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে। কেননা, চলতি মাসেই বর্তমান কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। গত বছর মেয়াদ শেষে অবসরে না পাঠিয়ে আরও এক বছরের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে মোহা. শফিকুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ অক্টোবর। সে কারণেই এই পদে নতুন কে আসছে সেটি নিয়েই আগ্রহ সবার।
আইজিপি পর বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম সম্মানজনক পদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার যা পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিটও। ডিএমপির ৩৬তম কমিশনার হিসাবে কে আসছেন, তা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে জল্পনাকল্পনাও চলছে। বিশেষ করে ঢাকায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সে বিষয়ে আরও বেশি আগ্রহ। ইতোমধ্যেই আলোচনায় থাকা কয়েক জনের নামও শোনা যাচ্ছে। সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা, কর্মজীবনের সফলতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এসবের সমীকরণ মিলিয়েই আসবে এই পদে নতুন কেউ।
অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমানসহ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেনের নাম আলোচনায় আসছে বেশি। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় এসব নাম জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদগুলোর মধ্যে একটি ডিএমপি কমিশনারের পদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে পরেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে প্রজ্ঞাপন আকারে।
একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললেও কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। এক কর্মকর্তা জানান, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দেখবেন। এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
তবে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে আলোচনায়। ডিএমপি কমিশনার আলোচনায় থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই। তবুও এটুকু বলব সরকার যখন দায়িত্ব যেটি দিয়েছি শতভাগ চেষ্টা করেছি। যেখানে আছি সেটিও ভালো। সামনে কোনো দায়িত্ব আসলে সেটিও সবার সহযোগিতায় পালন করব। আমার মতে দায়িত্ব যেই পাক তিনিই শতভাগ চেষ্টা করবেন সঠিক দায়িত্ব পালনের।
একাধিক তথ্যে যে নামগুলো জানা গেছে তাদের মধ্যে ডিএমপি কমিশনার হওয়ার তালিকায় থাকা পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (ডেভেলপমেন্ট) হিসাবে কর্মরত মো. আতিকুল ইসলামের নাম আছে। তার জন্ম ১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার জুম্মাপাড়ায়। বিসিএস ১২ ব্যাচের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন তিনি। বেসিক ট্রেনিং শেষে শিক্ষানবিশ এএসপি হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় যোগ দেন। এরপর সহকারী পুলিশ কমিশনার এবং উপ পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিভিন্ন জোনে দায়িত্ব পালন করেন আতিকুল। পুলিশ স্টাফ কলেজ ঢাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পুলিশ সুপার সিআইডি এবং গাজীপুরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে পদোন্নতি পেয়ে এআইজি, ২০১২ সালে অতিরিক্ত ডিআইজি (ওএন্ডএম), ২০১৪ সালে ডিআইজি (এইচআর) হিসেবে পুলিশ হোডকোয়াটার্স এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে ডিআইজি (হাইওয়ে) এবং ২০১৯ সালে নৌ পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশে অসাধারণ ও দৃষ্টান্তমূলক চাকরির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ছয়বার আইজি ব্যাজ, দুইবার বিপিএম সার্ভিস, দুইবার পিপিএম (সেবা) (গ্যালান্ট্রি) অর্জন করেন। আতিকুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া সুলাতানা বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
আলোচনায় থাকা আরেক অতিরিক্ত আইজিপি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান মাহবুবুর রহমান। তার জন্ম জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ১৫তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। এএসপি হিসাবে নরসিংদী জেলা পুলিশে, সার্কেল এএসপি হিসাবে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর সার্কেল ও বাজিতপুর সার্কেলে এবং এএসপি সদর সার্কেল হিসাবে নেত্রকোনা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি) হিসাবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাবে কর্মরত ছিলেন।
