গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে কাতারের দোহায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া এড়াতে দোহার আলোচনায় গাজা যুদ্ধবিরতি সম্মত হতে লড়াইরত পক্ষগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। এদিকে ১১ মাস ধরে চলা গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪০
হাজার ছাড়িয়েছে।
সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানায়, কাতার, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।হামাস এতে সরাসরি অংশ নিয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত ৩১ জুলাই হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কমান্ডার ফুয়াদ শোকর হত্যা ঘিরে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার পারদ চড়েছে। এই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি লড়াই বেঁধে গেলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। এতে গাজায় যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
ইরান, হামাস ও ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে সাবধান করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুলরহমান আল থানি গত বুধবার বলেছেন, এই অঞ্চলের কোনো পক্ষের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যা কি না যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই নেতা এক ফোনালাপে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য ইসরায়েল ও হামাসকে আমন্ত্রণ জানায়। দোহার আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দোহার আলোচনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নসের অংশ নেওয়ার কথা।
ইসরায়েল জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও শিন বেতের প্রধানরা দোহায় আলোচনায় অংশ নেবে। তবে এই আলোচনায় হামাস অংশ নেবে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের বলেছেন, হামাসের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাতার চেষ্টা চালাচ্ছে। হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ নেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। আরো বেশি আলোচনা করার বদলে হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বাস্তবায়ন দাবি করেছে।
গত ৩১ মে বাইডেন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির জন্য তিন ধাপের একটি রূপরেখা উত্থাপন করেছিলেন। এদিকে গাজায় হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের ফেরত আনতে ইসরায়েলি সরকারকে চাপ দিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলে অর্থমন্ত্রী নির বারকাতের জেরুজালেমের বাড়ির সামনে গতকাল সকালে আন্দোলন করার সময় চারজনকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি পুলিশ। আন্দোলনকারীরা গাজা থেকে জিম্মিদের ফেরত আনতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য দাবি করেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে জানায়, গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে আহত হয়েছে অন্তত ৯২ হাজার ৪০১ জন। গাজার প্রেস অফিস এর আগে জানিয়েছিল, গাজায় নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। ১১ মাসে গড়ানো হামলায় গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহচিত্রে ছবি বিশ্লেষণ করে আভাস মেলে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার ৬০ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।