ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের প্রভাবশালী রাষ্ট্র চীনকে পাশে পেয়ে ফুরফুরা মেজাজে আছে পাকিন্তান।
এ অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফ ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে ভারত যদি কোনও বাঁধ কিংবা এ জাতীয় কোনও স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে পাকিস্তান সামরিক হামলা চালাবে।
লাহোরে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত জেনারেল ঝাও শিরেন সম্প্রতি বলেছেন, চীন সবসময় পাকিস্তানের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন জানাবো।
তিনি আরও জানান, বেইজিং ইসলামাবাদের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।
চীনের রাষ্ট্রদূত একইসঙ্গে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, যুদ্ধ কখনোই সমস্যার সমাধান হতে পারে না, বরং শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক উপায়ে সমাধান খুঁজে বের করাই একমাত্র পথ।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির সেন্ট্রাল পাঞ্জাব শাখার নেতাদের সঙ্গে এক দীর্ঘ বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের শেষে উভয়পক্ষ চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে ‘দীর্ঘস্থায়ী ও পরীক্ষিত বন্ধুত্ব’ হিসেবে পুনঃনিশ্চিত করে।
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনা বাড়ছে, তখন চীনের এমন অবস্থান শুধু কূটনৈতিক সমর্থন নয় বরং এই অঞ্চলের শক্তির ভারসাম্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক প্রাণ হারান। এই ঘটনার পর থেকে ভারত কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একতরফা ভাবে পাকিস্তানকে দোষারোপ করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তান প্রথম থেকেই বলে আসছে, এটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটা সাজানো নাটক।
সৌদি আরব থেকে যেভাবে রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করে তিনি ভারত ফিরে আসেন, তাতে সবাই ধরেই নিয়ে ছিলেন- ভারতের পা দিয়েই প্রথমে তিনি কাশ্মীর যাবেন।
কিন্তু তিনি গেলেন বিহারে। কিছুদিন পরেই ওই রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন, আর এবারের নির্বাচনে সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই দেশবাসীর নজর অন্যদিকে ঘোরাতেই কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার নাটক সাজিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনার পর থেকেই দু’দেশের সীমান্তে গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং সামরিক মহড়ার মধ্যে দিয়ে যেন যুদ্ধের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র চীন।
পাশের ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোও পছন্দ করে না ভারতের দাদাগিরি। এ ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবে পাকিস্তান।
অন্যদিকে,েপেহেলগাম হামলার পরই যেভাবে সাম্প্রদায়ীক বিষবাষ্প ছড়ানো শুরু করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতায় চলা রিপাবলিম বাংলার মতো কিছু কিছু নিম্নমাণের গণমাধ্যম।
এ সব মিডিয়ায় মুসলিম ও কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ও মনগড়া সংবাদ প্রচার করতে থাকে। কিন্তু সেদিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা পর্যটকরা বলেছেন, কাশ্মীরি মানুষ একেকজন বজরঙ্গি ভাইজান।
তারা যেভাবে সন্ত্রাসীর বন্দুকের নলকে তুচ্ছ করে পর্যটকদের বাঁচিয়েছেন, তা কাশ্মীরিদের মতো বড় মন ও সাহসী মানূষ ছাড়া সম্ভব না। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তারা মেহমানদের হেফাজত করেছেন।
দুর্গম পাহাড় থেকে কাঁধে করে ১২ কিলোমিটার গিরিপথ বেয়ে বহু পর্যটককে নিরাপদে নামিয়ে এনেছেন। পর্যটকদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, বিনামূল্যে তাদের খাবার খাইয়েছেন।
হোটেল রেস্তোরাঁ ফ্রি করে দিয়েছেন পর্যটকদের জন্য। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো হিন্দু-মুসলিম বিভেদ করেননি। অনেক পর্যটককে বিনা পয়সায় তাদের ট্যাক্সিতে করে অন্য রাজ্যে গিয়ে পোৗছে দিয়ে এসেছেন।
এসব পর্যটকরাই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাশ্মীরিদের প্রসংশায় ভাষাচ্ছেন। তারা বলছেন, এতোদিন আমরা কাশ্মীরিদের বিষয়ে কিছু গণমাধ্যমের কারণে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতাম।
কিন্তু পেহেলগামের ঘটনায় তাদের চোখ খুলে গেছে। তারা এখন কাশ্মীরিদের খুব আপন মানুষ মনে করছেন। সব মিলিয়ে পেহেলগাম কাণ্ডের পর সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে প্রভাবশালী প্রতিবেশী চীনকে পাশে পেয়ে মনোবল অনেকটাই বেড়ে গেছে পাকিস্তানের।