জন্মের পরই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার বিধান রেখে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২২’এর খসড়া শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একইসঙ্গে এই আইন অনুযায়ী এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে চলে যাবে।
সোমবার (১০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই আইন অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইনটি (জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন) ২০১০ সালের। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কাছে (এনআইডি কার্যক্রম) আছে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এটা সরকারের কাছে নিয়ে আসতে চাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার আইডি নিয়ে শুরু হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে এটা এনআইডি হিসেবে রূপান্তর করা হয়। তখন বেসিক কনসেপ্ট ছিলো নির্বাচন সংক্রান্ত।
পরবর্তী সময়ে যখন এনআইডিকে রূপান্তর হলো তখন এটার সঙ্গে অন্যান্য কর্মসূচি যোগ করে দেওয়া হলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে, এটা (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা। কারণ নির্বাচন কমিশন সবক্ষেত্রে সরকারের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। সেজন্য এটা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা পাসপোর্টটা হ্যান্ডেল করে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন আলটিমেটলি একটা ইউনিক আইডিতে চলে যাচ্ছে। আজকে মন্ত্রিসভা বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে, আমি ওই জাতীয় একটা কমিটির সভাপতি, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে- জন্মের সাথে সাথে যে রেজিস্ট্রেশনটা হবে, আলটিমেটলি আজ থেকে ৫/৬ বছর পর ওই নাম্বারটাই সব জায়গায় যাবে। সেজন্য পাসপোর্টের সঙ্গে একটু সিনক্রোনাইজ করে জন্মের সময় নম্বরটা দিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের ক্ষেত্রে এটা পারা যাবে না, আমরা আমরা তো ইতোমধ্যে জন্মগ্রহণ করেছি। আগামী হয়তো ৩/৪ বছর পর জন্মের সাথে সাথে তার (নতুন জন্ম নেওয়াদের ক্ষেত্রে) ফিঙ্গার প্রিন্ট, চোখের দৃষ্টি, মুখচ্ছবি সবই দিয়ে দেয়া হবে এবং মডিফিকেশন হবে। আমরা বয়স্ক আমাদের মডিফিকেশন লাগবে না, আমাদের একবার দিলেই হবে। এজন্য এটা সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
আইনটা একটু রিভিউ করা দরকার বলে মন্ত্রিসভা মনে করে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ আগের আইনে ৩২টি ধারা ছিল, সেটা থেকে কমিয়ে ১৫ করা হয়েছে, অনেকগুলো ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে মন্ত্রিসভা সম্মত হয়নি। বলেছে, এটাকে রিভিউ করার জন্য। একটা উদাহরণ দিই, ছয় বা সাতটি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদ দণ্ড ছিলো, এ আইনে সবগুলো একসাথে করে সাজা সাত বছর কারাদণ্ড করা হয়েছে। ছোট অপরাধের জন্য তো সাত বছরের কারাদণ্ড হবে না। সেজন্য এগুলোকে আলাদা করে রেখে দিতে হবে।
নতুন ব্যবস্থায় কারা ভোটার আইডি পাবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভোটার আইডি ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের দেওয়া হয়। এখন একটা ডাটাবেইজ করে, ইন্টার-অপারেটিবিলি (আন্তঃকার্যক্রম), ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যাবে। তারা (নির্বাচন কমিশন) চাইলে নিতে পারবে, আলাদা ডাটাবেইজও করতে পারবে। পাসপোর্ট বা অন্য যে কোন কিছু করার জন্য সবার (অন্যান্য সরকারি সংস্থার) ওই ডাটাবেইজে ওয়ার্কিং এন্ট্রি থাকবে।
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার খসড়াও মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সভায়। এখানে সর্বসম্মতিক্রমে খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
সচিব বলেন, এই অভিযোজন পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য ২৩টি মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করতে ২২০ বিলিয়ন সমপরিমাণ মার্কিন ডলার খরচ হবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটাকে আরও যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।


