যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নতুন নতুন জ্বালানি ক্ষেত্র অনুসন্ধানে উৎসাহ যোগানোর ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে পানি ঢাললেন।
নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বাইডেন এ সিদ্ধান্ত নিলেন। তার এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কঠিন হতে পারে।
১৯৫৩ সালের ‘আউটার কন্টিনেন্টাল শেলফ ল্যান্ডস অ্যাক্ট’ এর আওতায় বাইডেন তেল ও গ্যাস উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছেন।
এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এ উপকূল খনন করে তেল ও গ্যাস উত্তোলন করলে আমাদের প্রিয় জায়গাগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি হবে। আর আমাদের দেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতেও এখন নতুন করে তেল গ্যাস উত্তোলন করা অপ্রয়োজনীয়।”
তিনি আরও বলেন, “যেহেতু জলবায়ু সংকট দেশজুড়ে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাই এখন আমাদের সন্তান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই উপকূলগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন।”
বিবিসি লিখেছে, বাইডেন পুরো আটলান্টিক উপকূল এবং পূর্ব মেক্সিকো উপসাগরের পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং ওয়াশিংটনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল এবং আলাস্কার বেরিং সাগরের একটি অংশ জুড়ে তেল-গ্যাস উত্তেলনে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা নেওয়ার আগে বাইডেন প্রশাসনের শেষ মুহূর্তে জলবায়ু নীতি নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে এটি সর্বশেষ।
অথচ যুক্তরাষ্ট্রে গতবছর ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে ট্রাম্প তার প্রচারণায় গ্যাসের দাম কমানোর জন্য দেশীয় জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এর আগে সেপ্টেম্বরেও ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম দিন থেকেই তিনি নতুন করে তেল-গ্যাস উত্তোলনের অনুমোদন দেবেন। আর্কটিক অঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে তিনি তেল উত্তোলনের অনুমতি দিতে চান। তার মতে, এ পদক্ষেপ জ্বালানির দাম কমাতে সহায়ক হবে।
যদিও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তেল ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যে নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, তা অনেক আগেই অতিক্রম করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি বাইডেনের সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন নীতি পাল্টানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে বাইডেন জ্বালানি খাতে নতুন যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তার শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা নেই। ফলে রিপাবলিকানদের পক্ষে এটি বাতিল করা কঠিন হতে পারে।
কারণ, ‘আউটার কন্টিনেন্টাল শেলফ ল্যান্ডস অ্যাক্ট’ এর আওতায় আরোপিত এ নিষেধাজ্ঞা কোনও প্রেসিডেন্টের প্রত্যাহার করার সুস্পষ্ট কোনও এখতিয়ার নেই। অর্থাৎ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতা নেওয়ার পর বাইডেনের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে চাইলে তাকে কংগ্রেসের মাধ্যমে আইন পরিবর্তন করতে হবে।
জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সির শেষ মুহূর্তে নেওয়া এই পদক্ষেপ সাগরে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ার ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমাবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে বায়ুমণ্ডলে আরও গ্রিনহাউজ গ্যাস যোগ হওয়া ঠেকাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে তা নেবেন না- এমন আশঙ্কা থেকেই বাইডেন তেল-গ্যাস উত্তেলন নিষিদ্ধ করলেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
গত সপ্তাহে বাইডেন এই নীতি নেবেন বলে খবর প্রকাশের পর ট্রাম্পের নতুন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট একে ‘লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
তবে, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বাইডেনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সমুদ্র সংরক্ষণ সংস্থা ওশেনা’র মুখপাত্র জোসেফ গর্ডন এ পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের মূল্যবান উপকূলীয় জনগোষ্ঠী এখন তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত।”
ধারণা করা হচ্ছে, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের অভিষেকের পর তিনি বাইডেনের এ পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টে যেহেতু রিপাবলিকান বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেকারণে রায় ট্রাম্পের পক্ষেও যেতে পারে।
পরিবেশবিদ এবং ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনকে তেল ও গ্যাস উত্তেলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারণ, নতুন করে তেল ও গ্যাস উত্তোলন শুরু হলে তা গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বলছে, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে প্রতি বছর তেল ও গ্যাসের চাহিদা বছরে ৫ শতাংশ কমানো প্রয়োজন।