সামরিক আইন জারির ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার দুই সামরিক কমান্ডারকে অভিযুক্ত করেছেন প্রসিকিউটররা। অভিযুক্তরা হলেন সেনাপ্রধান পার্ক আন-সু ও সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটের কমান্ডার কেয়াক জং-জিউন। বিদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত এ দুই কর্মকর্তা বর্তমানে কারাগারে আছেন।
উত্তর কোরিয়াপন্থি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষার ঘোষণা দিয়ে ৩ ডিসেম্বর হঠাৎ করে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করা হয়। ওই দিন গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়াইটিএনে দেওয়া জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি। যদিও বিরোধীদের তীব্র আপত্তি ও সংসদে ভোটাভুটির পর মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন তিনি। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান আছে।
সামরিক আইন জারির পর সামরিক আইন কমান্ডার (মার্শাল ল কমান্ডার) হিসেবে সেনাপ্রধান পার্ক আন-সুর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। অন্যদিকে কেয়াক জং-জিউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর অধীন বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের পার্লামেন্ট ভবনে পাঠিয়েছিলেন। সামরিক আইন জারির জেরে প্রেসিডেন্ট ইউন গত ১৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে অভিশংসিত হন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দেশটির সাংবিধানিক আদালত যদি ইউনের অভিশংসন বহাল রাখেন, তাহলে তাঁকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারণ করা যাবে। তদন্তকারীরা ইউনের সামরিক আইন জারির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।
৩১ ডিসেম্বর ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন দেশটির একটি আদালত। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে আজ শুক্রবার তাঁর বাসভবন ঘেরাও করা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর বলছে, তাঁকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়া তদন্তকারী ও পুলিশকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছেন ইউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা। ইউনকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করার জন্য তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দল।
সামরিক আইন জারির পর টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইউন সুক-ইওল বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি এবং রাষ্ট্রবিরোধী উপাদানগুলোকে নির্মূল করতে একটি উদার ও গণতান্ত্রিক দক্ষিণ কোরিয়া পুনর্গঠন করব। জনগণের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব বজায় রাখতে এটি একটি অনিবার্য পদক্ষেপ।
প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন, জনগণের জীবন-জীবিকার তোয়াক্কা না করে বিরোধী দল কেবল অভিশংসন, বিশেষ তদন্ত এবং তাদের নেতাকে বিচার থেকে রক্ষা করার জন্য শাসন ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ইউন বলেন, আমাদের পার্লামেন্ট এখন অপরাধীদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে গেছে। এটি একটি আইন প্রণয়নের স্বৈরতান্ত্রিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যা আমাদের উদার গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে। মাদক অপরাধ মোকাবিলা এবং জননিরাপত্তা বজায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর বাজেট কাটছাঁট করে দেশকে মাদকের অভয়ারণ্য এবং জননিরাপত্তাহীনতার অবস্থায় পরিণত করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইউন বিরোধী আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তারা রাষ্ট্রের প্রধান কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য সব বাজেট ছেঁটে ফেলেছেন। তিনি বলেন, আমি যত দ্রুত সম্ভব রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনব। অন্যদিকে ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি দেশটির সামরিক বাহিনীকে উদ্ধৃত করে বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় সংসদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে ও মিডিয়া এবং প্রকাশকরা সামরিক আইনের কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত সংসদের সঙ্গে ইউনের মতবিরোধ চলে আসছে। বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং শাসক পিপল পাওয়ার পার্টির মধ্যে আগামী বছরের বাজেট বিল নিয়ে চলমান অচলাবস্থা আরও উত্তেজনা তৈরি করেছে।