সৌদি আরবের জেদ্দায় আজ ও আগামীকাল আইপিএল নিলামে উঠতে যাচ্ছে ক্রিকেটার কেনাবেচার ঝড়। নিলামে কাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগে, কার দাম কত ওঠে, ক্লাবগুলো কেমন দল গড়ছে– এসবে নজর থাকে ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাংলাদেশের ভক্তরা তাকিয়ে থাকবেন মুস্তাফিজ-তাসকিন-সাকিবদের দিকে…
মেগা নিলাম: আইপিএলের ১৮তম আসরে এবার মেগা নিলাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাধারণত তিন বছর পর পর এই মেগা নিলাম হয়, বাকি বছরগুলোতে হয় ‘মিনি নিলাম’। তিন বছর পরপর প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে বড় ধরনের রদবদল হয়ে থাকে। কেননা এই সময়ে সবচেয়ে কম ক্রিকেটারকে ধরে রাখতে পারে প্রতিটি দল। এবার যেমন প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি সর্বোচ্চ ছয় ক্রিকেটারকে তাদের পুরোনো স্কোয়াড থেকে রেখে দিতে পারছে। এ কারণে নিলামে প্রচুর অর্থ নিয়ে তারা অনেক বেশি ক্রিকেটার দলে ভেড়ায়। আগামী বছর ১৪ মার্চ থেকে মাঠে গড়াবে আইপিএল।
নিলামে কতজন ক্রিকেটারের নাম রয়েছে: ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ন্যূনতম ১৮ ক্রিকেটার তাদের স্কোয়াডে রাখতে পারে। এবারের নিলামে ভারতীয় ও বিদেশি মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৫৭৪ জন নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। তবে এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে আইপিএল কর্তৃপক্ষ ৫৭৪ ক্রিকেটারের নাম নিলাম অনুষ্ঠানের জন্য চূড়ান্ত করেছে। যার মধ্যে ৩৬৬ ভারতীয় এবং ২০৮ বিদেশি ক্রিকেটারের নাম রয়েছে।
১২ বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নাম রয়েছে: এবারের মেগা নিলামে সর্বমোট ১২ বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নাম রয়েছে। যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যে রয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজের। এ ছাড়া রিশাদ হোসেন, লিটন কুমার দাস, তাওহিদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, শেখ মেহেদি, হাসান মুরাদ ও পেসার নাহিদ রানার ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ লাখ রুপি। বিসিবি থেকে ছাড়পত্র নিতে হলেও নিলামে নাম ওঠাতে হয় ক্রিকেটারদের নিজস্ব এজেন্ট দিয়ে।
দামি ক্রিকেটার: ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যে ক্রিকেটারদের তাদের পুরোনো স্কোয়াড থেকে রেখে দিয়েছে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি রুপি সম্মানী পাচ্ছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটার হ্যানরি ক্লাসেন। ভারতীয়দের মধ্যে বিরাট কোহলিকে সর্বোচ্চ ২১ কোটি রুপি দিয়ে ধরে রেখেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। নিকোলাস পুরানও ২১ কোটি রুপিতে থেকে যাচ্ছেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসে। মুম্বাইতে জাসপ্রিত বুমরাহ, হায়দরাবাদে প্যাট কামিন্স, চেন্নাইয়ে ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, রবীন্দ্র জাদেজা, রাজস্থানে সঞ্জু স্যামসন ও যশস্বী জয়সোয়াল ১৮ কোটি রুপিতে তাদের পুরোনো দলেই থেকে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশি ১২ ক্রিকেটারের ভাগ্যে কি আছে?
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে চর্চায় থাকবেন মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি আইপিএলে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সর্বশেষ আসরে ছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসে। সানরাইজার্সের হয়ে আইপিএল শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০১৬ সালে ১৬ ম্যাচে ১৭টি উইকেট নিয়েছিলেন। চেন্নাইয়ের হয়েও ৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট ছিল তার পকেটে। এবার ২ কোটি ভিত্তিমূল্যে আছেন টাইগার এই পেসার। বোলিংয়ে কিছুটা ধার কমলেও কাটার মাস্টারকে নিয়ে আগ্রহ দেখাতে পারে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
মুস্তাফিজের তুলনায় সাকিব আল হাসানের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু ধোঁয়াশা থাকছেই। মাঠের বাইরে নানা কর্মকাণ্ডে আলোচিত টাইগার অলরাউন্ডারের ফর্মটা ফিকে হয়ে এসেছে অনেকটাই। অবশ্য চলমান আবুধাবি টি-টেনে বল হাতে ছন্দে ফিরেছেন সাকিব। বাংলাদেশ থেকে এবার দল পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে পেসার তাসকিন আহমেদের। দেশের সেরা এই গতি তারকা এর আগে বিভিন্ন দল থেকে ডাক পেলেও বিসিবির ছাড়পত্র না পাওয়ায় খেলতে পারেননি। এবার তেমন বাধা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া নবীন স্পিডস্টার নাহিদ রানাকে নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেই এখন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবে সেটা আইপিএলে দল পাওয়ার জন্য যথেষ্ট কি না- বলা মুশকিল। লেগ স্পিনার রিশাদের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। তবে গত ভারত সফরে রিশাদ মোটেও ভালো করতে পারেননি। ৩ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন ৩টি, রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ১৪.১১ করে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে আরেক জায়গায়। যেখানে কোনো দলের আগ্রহ না থাকলে নিলামের টেবিলেই ওঠানো হবে না ক্রিকেটারদের নাম। মূলত নতুন ধরণের অ্যাক্সিলারেটেড অকশনের কারণেই হচ্ছে এমন কিছু।
মেগা অকশনে ৫৭৪ জন ক্রিকেটারের নাম থাকলেও তাদের সবাইকে যে উপস্থাপন করা হবে এমনটা নয়। বিষয়টি অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ হতে পারে। আর সময়ের ব্যপ্তি কমিয়ে আনতে চায় বিসিসিআই। আর এখানেই কাজে আসবে অ্যাক্সিলারেটেড অকশন। ১১৬ জন ক্রিকেটারের নাম উপস্থাপন করার পর এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা হবে।