ছাত্র আন্দোলনকে দলীয়করণের চেষ্টা না করার আহবান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি শনিবার বিকালে নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্যে এ আহবান জানান। একই সঙ্গে তিনি দুর্নীতিবাজদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি প্রমুখ।
সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যোগ দেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। জেলাপর্যায়ে মতবিনিময়ের প্রথম দিনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে আমাদের যে রাস্তা-ঘাটগুলো ছিল সেখানে অমুক দল তমুক দল ছিল না; কিন্তু আপনি যদি এখন রাস্তায় বের হন, দেখবেন দেয়াল পোস্টারে ছেয়ে গেছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সময়ে যেভাবে পোস্টার ছিল, ঠিক একইভাবে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। শুধু ছবিগুলোর পরিবর্তন হয়েছে। আপনাদের বলতে চাই- ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে আপনারা সেই আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, ছাত্রদের যে আন্দোলনটি হয়েছিল সেটি ছিল ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে। টেন্ডারবাজ এবং দুর্নীতিবাজ যারা রয়েছেন আপনাদের সতর্ক করতে চাই। আপনারা ১৬ বছর একটি দলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। এখন যদি আরেকটা দলের ছত্রছায়ায় এসে আপনারা দুর্নীতি করার চেষ্টা করেন, ছাত্র-জনতা আপনাদের দেখে নেবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই ছাত্র নাগরিকদের পাওয়ার কিছুই নেই, আমরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। আমাদের ছাত্র নাগরিক রাস্তায় এসে দাঁড়ায়, পুলিশের সামনে বুক পেতে দেয়। যেসব চাঁদাবাজ এবং টেন্ডারবাজ রয়েছে তাদের বলতে চাই, আমরা বুলেট-বোমা ভয় পাই না। আপনারা সতর্ক হয়ে যান। আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে পুঁজি করে আপনারা যদি ভেবে থাকেন আবার দুর্নীতি শুরু করবেন, তবে ছাত্র-নাগরিক আপনাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে।
ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের মানুষের ত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকাতে যখন আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন চট্টগ্রাম থেকে আপনারা আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আমরা দেখেছি ওয়াসিমরা কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, শান্তরা কিভাবে রক্ত দিয়েছে। আমরা সেই চট্টগ্রামে এসেছি। আমরা আপনাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, সংকটকালীন আমরা যেভাবে একসাথে হয়েছিলাম, এখন দেশটা পুনর্গঠনের সময়। আমাদের একইভাবে একসাথে থাকতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ প্রশাসনে কর্মরতদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা যদি ভেবে থাকেন আপনারা গোস্বা করে বসে থাকবেন, অফিস-আদালতের কাজ করবেন না, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। এ আন্দোলনে কামার ছিল, কুলি ছিল, মুচি ছিল। ঠিক একইভাবে এ আন্দোলনে শিক্ষিত শ্রেণীও ছিল। সুতরাং আপনাদের রিপ্লেসমেন্টও হয়ে যাবে।
পুলিশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ছাত্র এবং পুলিশ হচ্ছে ভাই-ভাই। আমাদের কোনো বিভেদ নাই। আপনারা আপনাদের কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে যারা খুনিদের দোসর ছিল তাদের আমরা জানি। সব পুলিশ কিন্তু বেনজীর না। সব পুলিশ ডিবি হারুন না। আমার বাবা, আমার ভাই- তারাও কিন্তু পুলিশ। সুতরাং পুলিশদের আমরা সহযোগিতা করব। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে যারা বর্তমানে মাঠে রয়েছেন তাদের আমরা প্রতিপক্ষ না ভেবে সহযোগী ভেবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব।