সম্প্রতি সম্মিলিত সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণকে পতাকা অবমাননার মামলায় গ্রেপ্তার করে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, তা অবাঞ্ছিত। সরকারের এই অপরিণামদর্শীতার কারণেই অযথা চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে মারা যেতে হল। আমরা সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই এবং সরকারের কাছে দাবি করি, অনতিবিলম্বে উপযুক্ত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আলিফ হত্যায় জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিচার নিশ্চিত করা।
আজ বৃহস্পতিবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বেশ কয়েকজনকে ভিডিও দেখে আলিফ হত্যায় জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা প্রত্যাশিত নয়। উপযুক্ত তদন্তের আগে আলিফ হত্যা নিয়ে কোনো ধরনের মিডিয়া বা ফেসবুক ট্রায়ালেরও আমরা বিরোধিতা করি। আলিফ হত্যার পরে যেভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তকারী মহল, সেটি প্রতিহত করতে যেভাবে দেশের সব পর্যায়ের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছেন, সেজন্য গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি দেশবাসীকে অভিনন্দন জানায়। বাংলাদেশের জনগণ আবারও কারও ফাঁদে পা না দিয়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, বাংলাদেশকে এখন যে নানান মাত্রিক দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে তার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন এই বৈচিত্র্যের ঐক্য। দেশের সব ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, শ্রেণি-পেশা সংস্কৃতির মানুষের মধ্যেকার ঐক্যই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু সরকারের কয়েকটি মহল এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর এ কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, গণঅভ্যুত্থানের পর গত তিন মাসে একের পর এক মাজারে হামলা হলো।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, প্রপাগান্ডা বাদ দিলেও হিন্দুদের বাড়িঘরেও হামলা হল, শ্রমিকের ওপর গুলি চলল, আদিবাসীদের ওপর হামলা হল, রিকশাওয়ালাদেরকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা চলল, নারীবিদ্বেষী প্রচার প্রপাগান্ডা চলল, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী কাজকর্ম চলল, বাজারে সিন্ডিকেটবাজি চলল। কিন্তু এই সবকিছুতেই সরকারের ভূমিকা আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় এবং অকার্যকর থাকল। উপরন্তু যে কোনো গণতান্ত্রিক দাবির আন্দোলনকেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাজ বলে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা, গণঅভ্যুত্থানকারী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজনসৃষ্টিকারী বক্তব্য প্রদান বা দায়িত্বজ্ঞানহীন মতামত প্রকাশ, সর্বোপরি পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম ব্যর্থতা– এসব কিছুই নানান রকম বিভাজনকে উসকে দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে, যার সুযোগ নেওয়ার জন্য পতিত স্বৈরাচার এবং দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তকারীরা বসে আছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা একারণেই মনে করি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াকে বিবেচনায় না নিয়েই পতাকা অবমাননার মতো বিভ্রান্তিমূলক মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করাটা সরকারের জন্য সুবিবেচক কোনো কাজ হয়নি। আমরা চাই, অনতিবিলম্বে চিন্ময়কে জামিন দেওয়া হোক। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে যদি দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হওয়ার কোনো তথ্যপ্রমাণ সরকারের কাছে থাকে তাহলে সেটা তারা আগে প্রকাশ করুক।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থানকে টিকিয়ে রাখতে হলে কোনো ধর্মের নামেই কোনো প্রকার ফ্যাসিবাদী চর্চাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ দেশের হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কোনো ধর্মের সাধারণ দেশপ্রেমিক মানুষই এসব ধর্মের নামে ফ্যাসিবাদী সংগঠনের তৎপরতাকে সুনজরে দেখেন না। ফলে আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, আইনজীবী আলিফের হত্যার বিচারের পাশাপাশি গত তিন মাসে ঘটা মাজারে হামলা, হিন্দুদের ওপর হামলা, আদিবাসীদের ওপর হামলা, শ্রমিকের ওপর গুলি চালানো, নারীদের ওপর হামলা- এসব ঘটনার কঠোর বিচার নিশ্চিত করুন। সব ধরনের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, নারীবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ, ঘৃণার চাষের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর অবস্থান নিন।