আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা না এলেও নির্বাচন কমিশন চলতি বছরের ডিসেম্বর ধরে সব প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের বড় কাজগুলোর অন্যতম ভোটার তালিকা হালনাগাদ। ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে নির্বাচন কমিশন। জুন মাসে এই তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি সারতে গিয়ে তালিকায় ভোটারদের তথ্যে করণিক ভুল হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, চলমান ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য কমিশন থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে আমরা দিন-রাত বিরামহীনভাবে কাজ করে তা এখন শেষ করার পথে। হালনাগাদের সময় একজন ডাটা অপারেটর প্রতিদিন ১৫০ জনের তথ্য এন্ট্রি করেছেন, একজন প্রুফ রিডার প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জন মানুষের তথ্য যাচাই করেছেন। এতে তালিকায় কিছু করণিক ভুল থাকতে পারে। তবে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য আমরা একটা সময় দিই। ওই সময় কেউ এলে ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ দেখে তা সংশোধন করে দেব।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এ আইন সংশোধন হলে প্রতি বছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি বছরের যেকোনো সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে সংস্থাটি। এছাড়া খসড়া ভোটার তালিকার ভুলত্রুটি (যদি থাকে) দূর করার লক্ষে খসড়া তালিকার তথ্য ভোটারের কাছে কার্যকরভাবে প্রচারের উদ্দেশে বিদ্যমান আইন ও বিধি পর্যালোচনা করে সুস্পষ্ট প্রস্তাবসহ কমিশনে উপস্থাপন করতেও আমাদের বলা হয়েছে।
আমি অনেক লোক নিয়ে কাজ করি। এখানে আমার কিছু ভুল হবে এবং এই ভুলের জন্য আমি শাস্তি মাথা পেতে নিতে পারি। আর যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে, কাউকে হয়রানি করে, তাহলে আমি তাকে ছাড় দেব না।
ইসি কর্মকর্তা
চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে করণিক ভুলের আশঙ্কা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, করণিক ভুল এবার বেশি হবে, এই আশঙ্কা আমি প্রথম দিনই করেছি। তবে এটির সমাধানের জন্য আমি কমিশনকে জানাব যে, যেহেতু আমরা একসঙ্গে ৬০ লাখের বেশি নাগরিকের নিবন্ধন করেছি এবং একদিনে একজন ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন নাগরিকের তথ্য টাইপ করে নিয়েছি, এজন্য কিছু ভুল হয়ে যেতে পারে। এ ভোটার তালিকা চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করার আগে ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ অনুযায়ী যাচাই করে যেগুলোতে ভুল পাওয়া যাবে, সেগুলো যদি ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ অনুযায়ী সংশোধন করে ফেলি, তাহলে ভোটার তালিকার মান আরও বাড়বে।
করণিক ভুলগুলো সংশোধনে নাগরিকদের কোনো ফি লাগবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, খসড়া ভোটার তলিকা প্রকাশের পর আমরা একটা রিভিউ কার্যক্রম পরিচালনা করি, যেখানে নাগরিকরা এলে ফরম-২ অনুযায়ী কোনো ফি ছাড়াই তা সংশোধন করে দেওয়া হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, আমি অনেক লোক নিয়ে কাজ করি। এখানে আমার কিছু ভুল হবে এবং এই ভুলের জন্য আমি শাস্তি মাথা পেতে নিতে পারি। আর যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে, কাউকে হয়রানি করে, তাহলে আমি তাকে ছাড় দেব না।
বিদ্যমান ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এ আইন সংশোধন হলে প্রতি বছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি বছরের যেকোনো সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে সংস্থাটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা
ইসি জানায়, সপ্তমবারের মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি। ১১ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করার কথা থাকলেও তা নয় দিন বাড়িয়ে ২০ এপ্রিলে মধ্যে শেষ করে ইসি। বর্তমানে সংগ্রহ করা তথ্য আপলোডের কাজ চলছে। ৬০ লাখের বেশি ভোটার আগামী জুনে তালিকায় যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সংখ্যা যুক্ত হলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
জানা যায়, ২০০৭-০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-১০ সাল, ২০১২-১৩ সাল, ২০১৫-১৬ সাল, ২০১৭-১৮ সাল, ২০১৯-২০ ও ২০২২-২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরকে টার্গেট করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে একাধিকবার বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে নিয়ে পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে সেটা ঠিক কোন মাসে হবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে সরকারের পক্ষ থেকে আজও বলা হয়নি। বিভিন্ন মহল থেকে এই সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার দাবি ওঠায় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।