দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম নির্দিষ্ট মতাদর্শিক আন্দোলনের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে
গভীর ক্ষোভ জানিয়ে এক যৌথভাবে বিবৃতি প্রদান করে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ বলেছে, প্রতিবেদন নির্দিষ্ট মতাদর্শের রুচির বহিঃপ্রকাশ। এর সঙ্গে আমাদের দেশের স্বকীয়তা, মৌলিক বিশ্বাস ও বাঙালি নারীর কোনো সম্পর্ক নেই।
শীর্ষ উলামায়ে কেরাম বলেন, নারী সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার নিকট যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তার প্রস্তাবনা, ভাষা, যুক্তি গোটা জাতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। এটা বিজাতীয় ধর্মবিমুখ, পরিবার বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের বিকৃত রুচির বিকাশের বহিঃপ্রকাশ। তথাকথিত ফেমিনিস্টদের পক্ষ থেকে এ দেশের নারীর হাজার বছরের আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা, তাহজিব তামাদ্দুন ও সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক এই সংস্কার প্রতিবেদন। এই বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন বাংলাদেশের নারীদের সর্বসাধারণের আদৌ প্রতিনিধিত্ব করে না।
ওলামায়ে কেরাম আরও বলেন, প্রতিবেদনে এক জায়গায় উপ-শিরোনাম করা হয়েছে, ‘পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে গড়ো সমতা’। এই ধরনের ভাষা ও প্রতিপাদ্যই নির্ধারিত ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীর চিন্তা ও সমাজ বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করে। বাঙালি নারী কখনোই পুরুষকে প্রতিপক্ষ ভাবেনি বরং সহযোগী ও সহকর্মী ভেবে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। পুরুষের সঙ্গে নারীর সম্পর্ক ক্ষমতার না বরং মায়া-মমতা ও ভালোবাসার। নারী জাতি আমাদের মা, সহধর্মিনী, বোন কন্যা ইত্যাদি সুন্দর পরিভাষায় সম্মানিত। মায়া-মমতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের কারণেই বাঙালি পুরুষ নারীর মর্যাদা রক্ষায় সাধ্যমতো প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকার এ দেশের সাধারণ জনগণের ওপরে মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতন জুলুম চালিয়েছে বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার আলেমদের এবং ইসলামী মূল্যবোধের যথাযথ মর্যাদা দেবে বলে আমরা আশা করি।
তারা বলেন, ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাশ্রুত পূর্বের সরকার ৭২ সংবিধানের ফেরত যাওয়ার আড়ালে দেশকে ইসলাম মুক্ত করণ, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম মুক্ত করে নাস্তিক্যবাদী নারী নীতি জোর করে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আবারো যদি এখনো ঘৃণা কর্মকাণ্ড করা হয় তাহলে তাদেরকেও ফ্যাসিস্টদের ভাগ্যবরণ করতে হবে।
শীর্ষ উলামায়ে কেরাম প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো-
১. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে এখনই বাতিল করতে হবে।
২. তাদের বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
৪. বাংলাদেশের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে দেশের হাজার বছরের আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা ও তাহজিব তামাদ্দুম সভ্যতা-সংস্কৃতির অনুকূল সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।
৫. বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সংস্কারের নামে সরাসরি কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী প্রস্তাবনা পেশ করার মতো স্পর্ধা যারা দেখিয়েছে এবং তাদের দোসরদের এখনই স্তব্ধ করত হবে।
শীর্ষ ইসলামিক স্কলারগণ আরও বলেন, অনতিবিলম্বে এ প্রশ্নবিদ্ধ প্রস্তাবনা বাতিল করে এ দেশের আপামর জনতাকে শান্ত করুন। অন্যথায় উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দায় নিতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শীর্ষ উলামা মাশায়েখরা হলেন, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমির মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ,হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাও. শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকি, খেলাফাতে রববানীর আমির মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাও. আহমদ আলী কাসেমী, পীর মাওলানা শরীফ হোসাইন, মুসলিম জনতা পরিষদের আমির মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ, মুফতি মাও. নাসির উদ্দীন কাসেমী, শাহ এমদাদুল্লাহ পীর সাহেব, হক্কানী ত্বরিকত মিশনের আমির শাইখ নুরুল ইসলাম ফয়েজী, হক্কানী ত্বরিকত মিশনের জেনারেল সেক্রেটারি আল্লামা মুস্তাক আহমাদ, ইসলামী ঐক্যমঞ্চ সভাপতি মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন, সেক্রেটারি আবদুস সাত্তার, খাদেমুল ইসলাম জামাত আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ, জমিয়াতে উলামা দেওবন্দ পরিষদের সভাপতি হযরত মাওলানা মুহাদ্দেস আবদুল্লাহ কাসেমী ও সেক্রেটারি হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক কাসেমী, মীরের সরাইর পীর সাহেব মাও. আ. মোমেন নাছেরী, টেকের হাটের পীর সাহেব মাও. কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, জাতীয় খতিব পরিষদের আমির মুফতি মাওলানা মাউদুর রহমান, হুফ্ফাজ পরিষদ সভাপতি হাফেজ লেয়াকত হোসাইন ও সেক্রেটারি মুফতি মাহবুবুর রহমান, ইসলামী অন লাইন অ্যাক্টিভিটস সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুস সামাদ ও মহাসচিব মুফতি আবু আনাস, কওমি হাফেজ পরিষদ সভাপতি মুফতি নূরুল আমিন গোপালগন্জী হুজুর,সম্মিলিত ইসলামিক জোটের আমির মাওলানা আবদুল বাকি, সেক্রেটারি জেনারেল মাও.মনিরুজ্জামান, জাতীয় ইমাম সোসাইটির মহাসচিব মুফতি জোবায়ের আহমদ কাসেমী, ইসলামী সমাজ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান আল কাশেমী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি জাকারিয়া, ইসলামী জনতার সভাপতি মুফতি আবদুল কুদ্দুস, মহাসচিব হাফেজ আবুল কাসেম, ইমাম কল্যাণ সমিতি সভাপতি পীর সাহেব মাওলানা কুতুবুল ইসলাম মাজহারী, সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি আবু সালেহ, আহকামে শরিয়াহর আহ্বায়ক মুফতি মাহবুবুর রহমান, সদস্য সচিব আব্দুস সবুর মাতুব্বর, অধ্যক্ষ মাওলানা লিয়াকত আলী ভুঁইয়া, অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, মুহাদ্দিস আবু বকর সিদ্দিক, ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদ সেক্রেটারি মুফতি মাহমুদুল হাসান, মাদ্রাসা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি- মাওলানা মহিউদ্দীন মাসুম, সেক্রেটারি মাওলানা এখলাছ উদ্দীন, তালিমুল কুরআন সোসাইটির আহ্বায়ক মুফতি আবদুল হালিম, মহাসচিব মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ মুফতি মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইখলাস উদ্দিন,ইসলাহুল উম্মাহ সভাপতি মাওলানা আবু হানিফ নেছারী, অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান, হাফেজ ফারুক হোসাইন, প্রফেসর মাওলানা মুফতি ইসহাক মাদানী, মাওলানা এহতেশামুল হক, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস আল কাসেমী, মহাসচিব শাইখ আব্দুল কাউয়ূম,জাতীয় ইমাম উলামা পরিষদের সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা ফজলুর রহমান ও মহাসচিব মাওলানা এবি.এম শফিকুল্লাহ, মাদরাসা মসজিদ ও খানকা ঐক্যপরিষদ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, আল কুরআন ফাউন্ডেশন সভাপতি মুফতি জামাল উদ্দীন ও সেক্রেটারি মুফতি ইসহাক প্রমুখ।