কবর জিয়ারত একটি উপকারী আমল। এতে কবরস্থ ব্যক্তি যেমন সওয়াব লাভ করেন, তেমনি নিজেরও উপকার রয়েছে। কবর জিয়ারতে অন্তর নরম হয়; পরকালের ভয় জাগ্রত হয় তাই কবর জিয়ারত একসময় নিষেধ থাকলেও পরে তা জায়েজ ঘোষণা করা হয়।
মূলত জাহেলি যুগের কবর পূজা সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টির জন্যই নবী (স.) প্রথমে উম্মতকে কবরের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন। মহানবী (স.) কবর জিয়ারতকারী নারীদের ওপর অভিশাপ করেছেন। (তিরমিজি: ১০৫৬)
এরপর যখন জাহেলি যুগের রসম-রেওয়াজ সমাজ থেকে দূর হলো তখন তিনি কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়ে বলেছেন- ‘আমি তোমাদের কবর-জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কারণ তা দুনিয়ার মোহ দূর করে এবং আখেরাতকে মনে করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১; মেশকাত পৃ. ১৫৪)
এরপর থেকে কবর জিয়ারত শুরু হলেও নারীদের কবরস্থানে যাতায়াত মোটামুটি কম ছিল। এ কারণেই হজরত আয়েশা (রা.)-এর মুখে তার ভাইয়ের কবর জিয়ারতের কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনে আবি মুলাইকা (রহ.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, নবী কারিম (স.) কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? হজরত আয়েশা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, নবী করিম (স.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কবর জিয়ারতের আদেশ করেছেন।’ (সুনানে বায়হাকি: ৬৯৯৯; মুস্তাদরাকে হাকিম: ১৩৯২)
হজরত ফাতিমা (রা.)-ও কবর জিয়ারত করেছেন মর্মে হাদিস রয়েছে। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবীকন্যা ফাতেমা (রা.) প্রতি জুমাবারে তার চাচা হামজা (রা.)-এর কবর জিয়ারত করতেন। তিনি সেখানে নামাজ পড়তেন, কান্না করতেন। (মুস্তাদরাক হাকিম: ১৩৯৬)
তবে, বর্তমান যুগে নারীদের কবর জিয়ারতে আলেমরা সাধারণত নিরুৎসাহিত করে থাকেন। তবে, কেউ মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে চাইলে সেক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরাম চারটি বিষয় ঠিক রাখার কথা বলেন। যেমন- ১. ধৈর্যহারা হবেন না তথা কবরস্থানে গিয়ে কান্নাকাটি, বিলাপ ইত্যাদি করতে পারবেন না, ২. পূর্ণ পর্দার সাথে বের হবেন, ৩. যাতায়াত নিরাপদ হতে হবে এবং ৪. কোনো প্রকারের ফিতনা বা গুনাহে জড়ানোর আশংকা থাকবে না। এই চার শর্তে নারীরা কবর জিয়ারত করতে পারবেন।
এরপরও নারীদের নিয়মিত কবর জিয়ারত করা অনুচিত। তবে, করবের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে নিচুস্বরে কবর জিয়ারতের দোয়া পড়লে কোনো অসুবিধা নেই। (আলবাহরুর রায়েক: ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার: ২/২৪২; হাশিয়াতুত তহতাবি আলাল মারাকি: পৃ. ৩৪০; বজলুল মাজহুদ: ১৪/২০৪; ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৫/২১১-২২২)