চুকনগর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে নির্মূল কমিটির খুলনা জেলার ওয়েবিনার
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
আজ ২০ মে ২০২১, সকাল ১১টায় চুকনগর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনা শাখা কর্তৃক আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির খুলনা জেলা সহ-সভাপতি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী।
ওয়েবিনারে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এ রশিদ, নির্মূল কমিটির যশোর জেলা সভাপতি হারুণ অর রশীদ, নির্মূল কমিটির খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনার সভাপতি হুমায়ূন কবির ববি, নির্মূল কমিটির চুকনগর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম, চুকনগর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম, সহ-অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান ও চুকনগর গণহত্যার ভুক্তভোগী সুন্দরী দাসী।
প্রধান আলোচক নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিশ্বের গণহত্যার ইতিহাসে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নয় মাসে ৩০ লক্ষ নিরীহ বাঙালির নৃশংস গণহত্যার দ্বিতীয় কোনও নজির নেই। বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এর ভেতর সবচেয়ে নৃশংস, বিস্তৃত ও পরিকল্পিত গণহত্যা ছিল ’৭১-এর ২০ মে খুলনার চুকনগরের গণহত্যা। মাত্র ৫ ঘন্টার ব্যবধানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চুকনগরের বিশাল প্রান্তরে দশ থেকে বার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, যারা প্রাণরক্ষার জন্য ভারতে যাওয়ার পথে কয়েক ঘন্টা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছেÑ এত ভয়াবহ ও ব্যাপক গণহত্যা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দূরে থাক, দেশের মানুষও খুব কমই জানেন।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করে ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার আরম্ভ করেছেন, যেখানে গত ১১ বছরে গণহত্যার জন্য দায়ী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন সময় এসেছে গণহত্যার জন্য দায়ী সংগঠনসমূহ যেমন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, মুসলিম লীগ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতির পাশাপাশি পাকিস্তানি হাই কমা-ের বিচার দ্রুত আরম্ভ ও সম্পন্ন করা। বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রধানতঃ পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের বিচারের জন্য আইসিটি আইন প্রণয়ন করেছিলেন, যে আইনের অধীনে বর্তমানে ঢাকায় ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে। পাকিস্তানি গণহত্যাকারীদের বিচার না হলে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না। ’৭১-এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনানায়কদের বিচার না হওয়ার কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখন সে দেশে বেলুচ ও সিন্ধি জাতির উপর গণহত্যা চালাচ্ছে। গণহত্যা যেখানেই ঘটুক গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি না হলে সমগ্র বিশ্বে গণহত্যা কখনও বন্ধ করা যাবে না। ’৭১-এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাইকমা-ের বিচার এখন সময়ের প্রধান দাবি।’
নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘চুকনগরের ভয়াবহ গণহত্যার প্রচার কম হয়েছে। চুকনগর গণহত্যার ওপর গবেষণামূলক বইগুলোর ইংরেজী করে বহির্বিশ্বে প্রচার করতে হবে। এগুলো প্রচার করে আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই যে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যে ব্যাপক গণহত্যা হয়েছিল, তার জন্য দায়ী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহায়তাকারী যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর বিচার এখনও হয় নি। চুকনগর সহ সারা দেশে গণহত্যার স্মৃতিগুলো এবং ভুক্তভোগীদের জবানবন্দীগুলো এজন্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।’
চুকনগর গণহত্যার ভুক্তভোগী সুন্দরী দাসী বলেন, ‘আমি অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছি। সরকারের বরাদ্দকৃত জায়গা এখনও ভরাট করতে পারি নি। সরকারের কাছে জায়গাটি ভরাট করে দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
সভায় অন্যান্য বক্তা চুকনগর গণহত্যার ভিকটিম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি রেকর্ড করা, এগুলো প্রচার করা এবং চুকনগরের গণহত্যার স্পটে একটি কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ এবং সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।