আলি আবরার
কী এই হারপ ড্রোন?
হারপ ড্রোন হলো Israel Aerospace Industries (IAI) নির্মিত একটি আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র। এর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ঘন্টার পর ঘন্টা শত্রু এলাকায় ঘুরে বেড়াতে পারে এবং লক্ষ্য শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটির উপর আত্মঘাতী আক্রমণ চালাতে পারে। এজন্য একে “ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট” ধরনের অস্ত্র হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে যা জানা গেছে:
- এটি একটি চালকবিহীন বিমান (UAV)।
- এতে থাকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ও ইলেকট্রনিক সেন্সর।
- এটি শত্রুর রাডার, কমিউনিকেশন সিস্টেম বা মোবাইল ইউনিট শনাক্ত করে।
- লক্ষ্যবস্তুর কাছে গিয়ে নিজেকে বিস্ফোরণ ঘটায়, যার ফলে লক্ষ্যবস্তু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
কে বানিয়েছে এবং কারা ব্যবহার করছে?
এই ড্রোন তৈরি করেছে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (IAI)। এটি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের কাছে রপ্তানি করা হয়েছে, যার মধ্যে ভারত অন্যতম। ভারত ২০০৯ সাল থেকেই এই ড্রোন ব্যবহার করছে, মূলত সীমান্তবর্তী নজরদারি ও স্ট্রাইক মিশনের জন্য।
ভারত এই ড্রোনকে চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে নিজের প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে।
মূল বৈশিষ্ট্য:
ধরন: লোইটারিং মিউনিশন / ক্যামিকাজে ইউএভি (Unmanned Aerial Vehicle)
উৎপাদনকারী: Israel Aerospace Industries (IAI)
ব্যবহারকারী দেশ: ভারত, ইসরায়েল, আজারবাইজান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, তুর্কমেনিস্তান প্রমুখ
ডেটা লিংক: রিয়েল-টাইম ভিডিও ফিড পাঠানোর সক্ষমতা
লম্বা সময় ধরে উড়তে পারে: একটানা ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত
রেঞ্জ: প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মিশন চালাতে পারে
ওজন: প্রায় ১৩৫ কেজি
বিস্ফোরক হেড: প্রায় ১৫ কেজি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম
সাইলেন্ট মোডে উড্ডয়ন: সহজে রাডারে ধরা পড়ে না
কাজ করার প্রক্রিয়া (How It Works):
- লক্ষ্যস্থানে পাঠানো ও নজরদারি:
হারপ ড্রোন উড়তে শুরু করে টার্গেট এলাকায়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে নির্দিষ্ট এলাকার উপর ঘুরতে থাকে। এর ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে এটি রিয়েল-টাইম ভিডিও ফিড পাঠায় গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনে। - লক্ষ্য শনাক্তকরণ:
ড্রোনটি শত্রুর রাডার, মোবাইল ইউনিট, কমান্ড সেন্টার বা সেনাবাহিনীর গাড়ি শনাক্ত করতে পারে। এটি রাডার সিগন্যাল বা ইনফ্রারেড সিগন্যালের মাধ্যমে শত্রু অবস্থান চিহ্নিত করে। - আত্মঘাতী হামলা:
লক্ষ্য নির্ধারণ হওয়ার পর, ড্রোনটি উচ্চ গতিতে নিচে নেমে আসে এবং নিজের সাথে থাকা বিস্ফোরক দিয়ে আত্মঘাতী আক্রমণ চালায়। এতে লক্ষ্যবস্তু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। - স্বয়ংক্রিয় ও নিয়ন্ত্রিত উভয় মোডে কার্যক্ষম:
এই ড্রোন ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রিত হতে পারে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবেও কাজ করতে পারে। অপারেটর চাইলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হামলা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
কেন এই প্রযুক্তি বিপজ্জনক?
নীরব ঘাতক: এটি শব্দহীনভাবে আকাশে ঘোরে, ফলে রাডার বা অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম অনেক সময় শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
উচ্চনির্ভুলতা: একবার টার্গেট পেলে এটি ঠিক সেই স্থানে হানা দেয়, আশপাশের ক্ষতি তুলনামূলক কম।
দীর্ঘ সময় নজরদারি: একটানা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে থাকায় এটি স্থির লক্ষ্য কিংবা চলমান যান শনাক্ত করে।
দাম তুলনামূলকভাবে কম: প্রচলিত ম্যানড এয়ারক্রাফট বা মিসাইলের তুলনায় কম খরচে তৈরি করা যায়।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সরকার এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এ ধরনের হামলা চালিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করবে এবং জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
কেন এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ?
- এটি সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- হারপ ড্রোনের মতো আত্মঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বেসামরিক স্থাপনাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
- দক্ষিণ এশিয়ায় দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুতর কূটনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে।
ভারতের এই ড্রোন হামলা এবং তাতে ব্যবহৃত হারপ প্রযুক্তি পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি শুধুমাত্র দুই দেশের সম্পর্কের জন্যই নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগের বিষয়।