কোথাও দাঁড়িয়ে আছে কংক্রিটের কয়েকটি খুঁটি, আবার কোথাও টিনের চালা ক্ষয়ে পড়ে রয়েছে শুধুমাত্র ধ্বংসাবশেষ। কেউ কেউ কোনোমতে পলিথিন দিয়ে ঘর ঢেকে কোনওভাবে টিকে আছেন। তবে টিকতে না পেরে ১৮০টি পরিবারের মধ্যে অর্ধেকই স্থানান্তরিত হয়ে গেছেন অন্যত্র। এ দৃশ্য পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সাঈদখালী চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গৃহহীন মানুষের জন্য ২০০৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সাঈদখালী চরে ১৮০টি ঘর নির্মাণ করে। কিন্তু ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে ঘরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর আরও কয়েকটি বড় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ঘরগুলোর অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়ে। বসবাসকারীদের অধিকাংশই সাধারণ মৎস্যজীবী ও দিনমজুর। তাছাড়া এখানকার অনেকেই এনজিওর ঋণে জর্জরিত। ফলে সংসারের খরচ মিটিয়ে তাদের পক্ষে নতুন ঘর নির্মাণ বা পুরাতন ঘরগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রায় ৮০টি পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুকনো মৌসুমে তারা কোনওভাবে ঘরে থাকতে পারলেও বর্ষাকালে তা অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রতি বর্ষায় পলিথিন দিয়ে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেন তারা। সরকার যদি জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ না নেয়, তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব বাসিন্দাই গৃহহীন হয়ে পড়বেন। এতে একদিকে যেমন বিপাকে পড়বেন এসব দরিদ্র মানুষ, তেমনি বেদখল হয়ে যেতে পারে সরকারি এই সম্পত্তি।
উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘বিগত সরকার দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্মস্থান হওয়ায় গত সতেরো বছরে সাঈদখালী চরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অতিদ্রুত মেরামত বা পুনর্নির্মাণ না করলে এসব পরিবার যেমন গৃহহীন হবে, তেমনি ভূমিদস্যুরা সরকারি সম্পত্তি দখল করে নিতে পারে। বর্তমান সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প উন্নয়ন শাখায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলোর সংস্কারের জন্য আবেদন করেছি। আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’
ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান-বিন-মুহাম্মাদ আলী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’