রাজশাহীতে নিজের প্রাইভেট সেন্টারের ছাত্রদের নিয়ে মামাকে কোপানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে এক ভাগ্নের বিরুদ্ধে।
এ সময় তারা দুই লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় বলেও ভুক্তভোগী মামার অভিযোগ।এ ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধেই অভিযুক্ত ভাগ্নেসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (৬ মে) দুপুরে আরএমপির শাহ মখদুম থানার ওসি ইসমাইল হোসেন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ছুরিকাঘাতের শিকার ব্যক্তির নাম জারমান আলী (৩১)। তিনি পুঠিয়ার কামার ধাদাশ এলাকার আফছার আলীর ছেলে৷ জারমান পেশায় ব্যবসায়ী। প্রধান অভিযুক্ত রাজন ইসলামের বাসাও একই এলাকায়। তারা সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। কামার ধাদাশ এলাকার মো. সোহরাব আলীর সঙ্গে জারমানের বোনের বিয়ে হয়।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান অভিযুক্ত রাজন ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আরও ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্য আসামিরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর এলাকার আশরাফুল ইসলামের ছেলে মো. আশিক ইসলাম (২১), রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মো. জাহিদ হাসান (১৯), মধ্য নওদাপাড়া এলাকার পরিমল মল্লিকের ছেলে দীপ্ত মোল্লিক (১৯), আমচত্বর এলাকার কামাল উদ্দিন সুমনের ছেলে সোহানুর রহমান জয় (২০), নওদাপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাদমান সাদিক (১৯), দক্ষিণ নওদাপাড়া এলাকার ফরজান আলীর ছেলে মো. আকাশ (১৮) ও শিল্পীপাড়া এলাকার শামীম হোসেনের ছেলে মো. সিহাব (১৮)।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার এক নম্বর আসামি রাজন নগরীতে একটি প্রাইভেট সেন্টার পরিচালনা করেন। সেখানকার ছাত্রদের নিয়ে মামার ওপর হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর তার কথামতো ছাত্ররা তার মামার ওপর হামলায় অংশ নেন।
ভুক্তভোগী জারমান আলী বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, রোববার (৫ মে) সকালে সিএনজিযোগে গরু কেনার জন্য সিটি হাটে যাচ্ছিলাম। নগরীর নওদাপাড়া পার হতেই কয়েকজন যুবক পথরোধ করে। তারা সিএনজি থামিয়ে আমাকে নামায়। এ সময় তারা আমাকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে আমার কাছে থাকা দুই লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
জারমান আলী বলেন, আমার ভাগ্নে রাজন লোকজন ভাড়া করে এ হামলা চালিয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে এমনটা করতে পারে। ৪ বছর আগে তাদের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয়েছিল। তবে আমার বোন ও বোন জামাইয়ের সঙ্গে আমাদের চলাফেরা ও যোগাযোগ ছিল। গত ঈদুল ফিতরেও তারা আমাদের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে গেছে। তবে রাজন আমাদের সঙ্গে কথা বলত না। হয়ত ৪ বছর আগের রাগ থেকেই এমনটা করে থাকতে পারে। আমি বিচার চাই, হামলাকারীদের শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে আরএমপির শাহ মখদুম থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, মামলার পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন আসামি রয়েছে। তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে পুঠিয়ার স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজন ইসলাম অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার পরিবারের অপকর্মে এলাকার সাধারণ মানুষও অতিষ্ঠ।
স্থানীয়রা জানান, রাজন আগে গ্রামেই কোচিং সেন্টার চালাতেন। সে সময় কোচিংয়ের ছাত্রীদের অনৈতিক প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ধরা খান। পরে শহরে প্রাইভেট ব্যাচ শুরু করেন। এছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি এবং চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছেন। তার পরিবার ও স্বজনদের কয়েকজন মাদক ও সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। পুঠিয়ার তাড়াশ এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের আলোচিত ঘটনার সঙ্গে তার পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের কয়েকজনের নাম রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছে রাজনের পরিবার।