সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সুন্দরবনের কালাবগি ফরেস্ট অফিস এলাকায় ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে এই জরিপ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার।তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে বাঘ জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই বাঘ জরিপের কর্মকান্ড শুরু করা হয়েছে। আমরা ৬৬৫টি গ্রীডে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ করবো। প্রত্যেকটি গ্রীডের দুইপাশে দু’টি ক্যামেরা থাকবে। এমন ভাবে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ করা হয়েছে, যেন বাঘ বা যে কোন পশু গেলে সেম্সর কাজ করবে, ছবি উঠবে। শুধু ছবিই উঠবে না, স্থান, কাল, পাত্র ও টেম্পারেচার উঠবে। কোন জায়গায় ছবি উঠেছে বিস্তারিত ক্যামেরায় রেকর্ড থাকবে। একটি প্রাণি যখন সেখান থেকে পার হবে, সবকিছু একই সঙ্গে উঠে যাবে, এমনকি ১০ সেকেন্ড ভিডিও ধারণ হবে। ৪০ দিন একই জায়গায় এই ক্যামেরা থাকবে। ১৫ দিন পর পর ক্যামেরা চেক করা হবে।বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, আজ (রবিবার) ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। মূলত খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পায়ের চিহ্নের উপাত্ত সংগ্রহ করা, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘের ছবি তোলা এবং বাঘ যে প্রাণী শিকার করে যেমন : হরিণ, শূকর কি পরিমাণ আছে সেটা দেখা। একই সঙ্গে সুন্দরবনের বাঘের কোনো রোগবালাই আছে কি না সেটা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম করা। এছাড়া বাঘ-মানুষের দ্ব›দ্ব। এই দ্ব›দ্ব নিরসন করতে পারলে আমরা বাঘ সংরক্ষণ করতে পারব। সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্ব›দ্ব নিরসনে ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিম, কমিউনিটি পেট্রোল গ্র“প এবং ভিলেজ কনজারভেশন ফোরামের সবাইকে নিয়ে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করবো। বাঘ যখন গ্রামে চলে আসবে, সেই সময়ে বাঘকে কীভাবে নিরাপদে সুন্দরবনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় সেই ব্যাপারে কাজ করবো। আর সুন্দরবনের ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগে। ওই এলাকা কিন্তু বাঘের আবাসস্থল। ওই আগুন নির্বাপণের জন্য সেখানে কিছু টাওয়ার স্থাপন করা হবে।তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের মোট ৬৬৫টি স্পটে ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি। প্রতিটি গ্রিডে একজোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। জরিপ কার্যক্রম শেষে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত