বৃষ্টি নামলেই ভয় আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। গত ২৪ ঘণ্টায় বজ্রপাতে অন্তত ১৩ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিলেন হাওরাঞ্চলে। এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মাঠে থাকা কৃষকদের মধ্যে।
ধান কাটতে গিয়েই প্রাণ গেল দুই কৃষকের
সোমবার সকাল। হাওরের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৫)। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে নিজ নিজ মাঠে ধান কাটছিলেন তারা। হঠাৎ আকাশে ঘন মেঘ জমে। আশপাশের অনেকে তখন নিরাপদ স্থানে চলে যান। কিন্তু এই দুই কৃষক থেকে যান মাঠেই।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ইন্দ্রজিৎ ও স্বাধীন। সময় বাঁচিয়ে একটু বেশি ফসল কাটার চেষ্টাই হয়ে উঠল তাদের জীবনের শেষ অধ্যায়।
২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু, এই বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ
রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সারাদেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১৩ জন। ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, এটি ২০২৫ সালের এক দিনে বজ্রপাতে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।
ফোরামের সমন্বয়কারী মেহেরুন নেছা জানান, এর আগে এই মাসের ১৬ তারিখ বজ্রপাতে ৯ জন মারা গিয়েছিলেন। গতকালকের মৃত্যুর পর চলতি মাসে বজ্রপাতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
বেশিরভাগ মৃত্যু হাওর এলাকায়, কৃষকরাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে
বজ্রপাতে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে হাওর এলাকায়। এই অঞ্চলে এখন ধান কাটার ব্যস্ত সময়। খোলা প্রান্তরে কোনো নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় কৃষকদের জন্য।
নিহতদের মধ্যে আছেন— কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের কৃষকরা। কুমিল্লার মুরাদনগরে মারা গেছেন কৃষক নিখিল দেবনাথ (৫৮) ও জুয়েল ভূঁইয়া (৩০)।
দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, হাওরের খোলা মাঠে কৃষকদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, মেঘ দেখলেই মাঠ ফেলে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে।
এদিকে নিহতদের মধ্যে তিনজন নারীও রয়েছেন। চাঁদপুরের কচুয়ায় বিশাখা রানী (৩৫), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে দুর্বাসা দাস (৩৫), এবং মিঠামইনের শান্তিগঞ্জ হাওরে ফুলেছা বেগম (৬৫) বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ধান কাটার কাজে ছিলেন বা মাঠের আশপাশে অবস্থান করছিলেন।
কীভাবে কমানো যাবে বজ্রপাতের ঝুঁকি
আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এপ্রিল-মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। এই সময় কালবৈশাখী ঝড়ও বেড়ে যায়, যার সঙ্গে থাকে বজ্রপাত, ঝড়ো হাওয়া এবং শিলাবৃষ্টি।
বজ্রপাতের সময় করণীয় হিসেবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—
জানালা ও দরজা বন্ধ রাখা
গাছের নিচে না দাঁড়ানো
বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা
জলাশয় থেকে সরে আসা
বিদ্যুৎ পরিবাহী বস্তু এড়িয়ে চলা
আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, বর্তমান বজ্রঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাই অন্তত আধা ঘণ্টার জন্য নিরাপদে থাকলেই জীবন বাঁচানো সম্ভব।
আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা
গত কয়েক দিনের তীব্র গরমের পর রোববার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে— ১১৫ মিলিমিটার। আজ মঙ্গলবারও (২৯ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেছেন, আজও বজ্রপাতের ঝুঁকি থাকবে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।