পাশাপাশি দু’টো বিশাল সাইজের হাড়িতে হালিম রাখা। মধ্য দুপুর থেকেই ক্রেতার আনাগোনা বাড়ছে। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দোকানের কর্মচারীদের ব্যস্ততা। দৃশ্যটি রোজায় চাহিদার শীর্ষে থাকা ইফতার আইটেমগুলোর একটি খুলনার ঐতিহ্যবাহী নানা হালিম দোকানের।
নানা হালিমের ঠিক অপরপাশে আরেকটি দোকানের চুলা থেকে ওঠানো হচ্ছে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম গরম পেয়াজু, জিলাপি, ডিমের বল, বেগুনি চপ, ফুলুরিসহ নানা ধরনের ইফতার সামগ্রী। পাশেই টেবিলে থরে থরে সাজানো দামসহ সেসব ইফতার সামগ্রী। এ চিত্র এখন খুলনা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কের মোড়ে মোড়ে। রমজানে ইফতার উপলক্ষে এসব অস্থায়ী ইফতার দোকান গড়ে উঠেছে নগরীর বিভিন্ন জায়গায়।
শুক্রবার (৭ই মার্চ) নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে মোড়ে মোড়ে নানা পদের বাহারি সব ইফতারসামগ্রীতে সাজানো দোকানগুলো জমে উঠেছে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে। নিজেদের পছন্দের ইফতার আইটেম বেছে নিতে দোকানে দোকানে ঘুরছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
খুলনা শহরের ইফতার বাজারের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুগুলো তো বটেই এবার নগরীর প্রাণকেন্দ্র শিববাড়ি মোড়ের পরিত্যক্ত জিয়া হল চত্ত্বরও বেশ জমে উঠেছে ইফতার বাজারে।
নগরীর পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনে, ডাকবাংলো মোড়, সোনালী ব্যাংক চত্ত্বর ফেরিঘাট মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শিববাড়ি মোড়, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, শান্তিধাম মোড়, বয়রা বাজার মোড় ও গল্লামারি ব্রীজ সংলগ্ন রাস্তাসহ প্রায় প্রতিটি সড়কের দুই পাশেই ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
দোকানগুলোতে পেঁয়াজু, বেগুনি, মাংসের চপ, সমুচা, আলুর চপ, মুড়ি-মুড়কি, ডিমের চপ, সবজি চপ, ছোলা ও হালিম, কাবাব, নান রুটি, পরোটা, রোল, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি, ফালুদা, লাচ্চিসহ নানান পদের খাবার বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ছোলা প্রতিকেজি ১৫০-১৬০ টাকা, পিয়াজু প্রতি পিস ৫-১০ টাকা, বেগুনি ৫-১০ টাকা প্রতি পিস, আলুর চপ পাঁচ টাকা, ডিমের চপ বড় প্রতি পিস ১৫-২০ টাকা, কাবাব-সাসলিক ৫০-১০০ টাকা, চিকেন চপ প্রতি পিস ২০-৩০ টাকা, চিকেন ললিপপ ৩০ টাকা, ফিস কাটলেট ৩০ টাকা, নারকেল পুলি ১০ টাকা, চিংড়ি চপ প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা, শাহী জিলাপি প্রতিকেজি ১৮০-২০০ টাকা, রেশমি জিলাপি প্রতি কেজি ৩২০-৩৪০ টাকা, শাহী হালিম প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রোজায় সারাদিন পর ইফতারে বিভিন্ন ধরনের পানীয় অন্যমাত্রা যোগ করে। ডাকবাংলো ও গল্লামারর মোড়ে বেশ কিছু পানীয়ের দোকান বসেছে রঙ-বেরঙয়ের পানীয় সাজিয়ে। এসব দোকানে বিভিন্ন ধরনের ফালুদা যেমন স্ট্রবেরি ফালুদা, ম্যাংগো ফালুদা ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকায়। হাফ লিটার লাচ্চির জন্য ১২০ টাকা এবং হাফ লিটার মাঠার জন্য ৭০ টাকা গুণতে হচ্ছে। স্পেশাল লেবুস জুস প্রতি গ্লাস ২০ টাকা, বেলের শরবত প্রতিগ্লাস ৩০ টাকাইয় বিক্রি করতে দেখা গেছে এসব দোকানে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে মোটামুটি সব ধরনের ইফতার সামগ্রীর দাম নগরীর অন্যান্য ইফতার বাজারের তুলনায় কিছুটা কম গল্লামারি ইফতার বাজারে।
খুলনার ঐতিহ্যবাহী নানা হালিমের দোকান পাইওনিইয়ার মহিলা কলেজের পাশেই। সেখানে একটি বড় মালসা হালিমের দাম রাখা হচ্ছে ১২০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন কোয়াটার বক্স হালিমের দাম ১০০ টাকা।
বয়রা থেকে নানা হালিম কিনতে আসা আখলাক হোসাইন বলেন, ইফতারি বাসায় বানানো হয়। তবে মাঝে মাঝে জিলাপি এবং হালিমের জন্য ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে আসতে হয়। এখানের হালিম অন্যান্য হালিমের চেয়ে ভিন্ন স্বাদের।
নানা হালিমের মালিক হজরত আলী বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি রমজানে এই হালিম বিক্রি করে আসছি। আমার হালিমে কোনো ভেজাল নেই। যার কারণে এত জনপ্রিয়।
নগরীর ফেরিঘাট মোড়ও অন্যতম বৃহৎ ইফতার বাজার। এখানের গরম গরম শাহি জিলাপি নিতে এসেছেন সোনাডাঙ্গার বাসিন্দা ও পেশায় চাকরিজীবী হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, জিলাপি আমাদের পরিবারের ইফতার আইটেমের অন্যতম আকর্ষণ। জিলাপি বেশিরভাগ সময় এখান থেকেই কিনি তবে আজ কিছু হালিম, চিকেন চপ সাথে জিলাপি কিনেছি। ।
গল্লামারি ইফতার বাজারে তুলনামূলক কম দামে ইফতার বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ইফতারি বিক্রেতা কাউসার শেখ বলেন, ইফতারের জন্য বানানো জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ বিক্রি হয়। এজন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও প্রায় সবধরনের ইফতারির দাম ৫-১০ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে।