সুপ্রিম কোর্টের অধীন বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনে আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব সংবলিত চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের মতামত নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের অনুমোদনক্রমে এই চিঠি পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে রোববার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ শাখার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিবৃন্দ, বিচার বিভাগ সংস্কারসংক্রান্ত কমিশনের চেয়ারম্যান, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি অভিভাষণে দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি রোডম্যাপ তুলে ধরেন, যাতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃথককরণের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। অভিভাষণে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনের লক্ষ্যে তিনি শিগগির পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক সরকারের অনীহার কারণে বিচার বিভাগের পৃথককরণ সম্ভবপর হয়নি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের মামলার সংখ্যা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি, অধস্তন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মপরিধি আগের তুলনায় ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলেও বিচার বিভাগের জন্য পৃথক একটি সচিবালয় স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই সার্বিক বিশ্লেষণে কেবল পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও অন্যান্য বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব।’
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়। কিন্তু বিচার বিভাগ রায় অনুযায়ী এখনও পুরো সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে পারেনি। এজন্য বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তাতে সরকার সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সমকালে বিচার বিভাগের সংকট শীর্ষক পাঁচ পর্বের প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।