কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল। প্রদেশটিতে শত শত শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি এই বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে বিমানবন্দরও।
দুর্যোগের মুখে পড়া ওই বিমানবন্দরটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পানি ও কাদায় তলিয়ে যাওয়া থেকে বাদ যায়নি ফুটবল স্টেডিয়ামও। বুধবার (৮ মে) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে নদীর পানি উপচে পড়ার পর পোর্তো আলেগ্রের বিমানবন্দরটি পানিতে তলিয়ে গেছে।
ব্রাজিলিয়ান এয়ারলাইন্স অ্যাসোসিয়েশন মঙ্গলবার বলেছে, গুয়াইবা নদীর তীর উপচে পানি বাইরে বেরিয়ে আসায় বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো প্লাবিত হওয়ার ঘটনায় পোর্তো আলেগ্রে বিমানবন্দরটি চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
নদীটির পানি রেকর্ড ৫.৩ মিটার (১৭.৪ ফুট) উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ১৯৪১ সালের। সেসময় এই নদীর পানি ৪.৭৬ মিটার উচ্চতায় পৌঁছেছিল।
ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলের রাজধানী পোর্টো আলেগ্রে বন্যায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেখানকার বিমানবন্দর ও বাস স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রধান সড়কগুলোও এখন অবরুদ্ধ।
বিবিসি বলছে, তলিয়ে যাওয়া বিমানবন্দরটিই একমাত্র বড় অবকাঠামো নয় যা পোর্তো অ্যালেগ্রেতে বন্ধ করতে হয়েছে। ব্রাজিলিয়ান এই শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস করে। এরিনা ডো গ্রেমিও স্টেডিয়ামের পিচটিও বাদামী কাদায় ঢেকে গেছে।
এছাড়া রয়টার্স বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। যেটাতে রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলের পোর্তো অ্যালেগ্রেতে স্পোর্ট ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের প্লাবিত বেইরা-রিও স্টেডিয়ামের দৃশ্য সামনে এসেছে।
পোর্তো আলেগ্রে শহরের আশপাশের কিছু এলাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ। যে এলাকাগুলোতে এই বন্যা সবচেয়ে খারাপভাবে আঘাত করেছে তার মধ্যে রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলে প্রদেশের ক্যানোয়াস শহরটিও রয়েছে।
এদিকে রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলে প্রদেশে প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় এখন পর্যন্ত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও ১৩০ জনেরও বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দেড় লাখ মানুষ।
বিবিসি বলছে, বন্যায় তলিয়ে যাওয়া কিছু শহর অন্যান্য অঞ্চল থেকে এখনও বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে এবং এখনও নিখোঁজ থাকা ১৩০ জনেরও বেশি লোককে খুঁজে পাওয়ার আশা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং সেটি হলে এই অঞ্চলের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে হয়েছে।
প্রদেশের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি বলেছে, বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯০ জনে পৌঁছেছে এবং আরও চারজনের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত চলছে। আরও ১৩১ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন এবং ১ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ বর্তমানে গৃহহীন।
মূলত গড় তাপমাত্রা, উচ্চ আর্দ্রতা এবং শক্তিশালী বাতাসের বিরল সংমিশ্রণের কারণে লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে চরম আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে।