বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারের পরোয়ানা দিয়েছে। এক আদেশে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারে রেড নোটিশ জারি করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ করেছেন আইসিটির প্রধান কৌশলী। তবে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আসেনি বলে জানিয়েছেন এর মুখপাত্র ও জনকূটনীতিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমসায়মিক বিষয়াদি নিয়ে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে সমসায়মিক বিষয়াদি তুলে ধরাসহ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান। এ সময়ে মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনার এবং দেশটির সরকারকে একাধিকবার স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক বিবৃতি ও বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটি বাংলাদেশ ভালোভাবে দেখছে না।
এ বিষয়ে সরকারের তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্য–বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের জন্য এ ধরনের বক্তব্য থেকে তাকে বিরত রাখাটা খুবই জরুরি।
এ নিয়ে ভারত থেকে কোনও উত্তর এসেছে কি না– জবাবে তিনি বলেন, ভারতের হাইকমিশনার জানিয়ে ছিলেন যে তিনি তার সরকারের কাছে বার্তাটি পৌঁছে দেবেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনও উত্তর পাইনি। ভারত বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? উত্তরে তৌফিক হোসেন বলেন, এ বিষয়টি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ফেরত আনার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। নির্দেশনা পেলে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ বিগত সরকারের কতজন ভারতে পালিয়ে রয়েছেন– উত্তরে মুখপাত্র বলেন, এ ধরনের কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। মন্ত্রণালয় যতটুকু জেনেছে, গণমাধ্যম থেকে জেনেছে।
জুলাই–আগস্ট গণআন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে ভারতের সঙ্গে কোনও আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে ভারতের কাছে কোনও অনুরোধ করা হয়নি।
ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভারতকে একাধিকবার জানিয়েছি। তারা জনবল সংকটের কথা বলে আসছে। তৃতীয় দেশের ভিসা আবেদন বিশেষ করে রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড ও বুলগেরিয়া এবং চিকিৎসা সেবার জন্য ভিসা আবেদনগুলো যাতে জরুরী ভিত্তিতে বিবেচনার জন্য বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নীতির কোনও সংস্কারের কার্যক্রম চলছে কি না– উত্তরে তৌফিক হাসান বলেন, আগে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বর্ধিত করা হতো। সেটি এখন আর হচ্ছে না। এ ডিসেম্বরে ৭–৮ জন রাষ্ট্রদূতদের মেয়াদ শেষ হবে, তাদের আর সময় বাড়ানো হবে না। এটি আমাদের সংস্কারের একটি অংশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরে কোনও ধরনের অস্থিরতা রয়েছে কি না– তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত বা কর্মকর্তাদের নিয়ে নেতিবাচক তথ্য দেখা যাচ্ছে, এটি দুঃখজনক। যারা তাদের নিয়ে তথ্য ছড়াচ্ছেন, তারা ভালো করছেন না। এটি বাংলাদেশ সরকারের নেতিবাচক ভাবমূর্তি বিদেশে ফুটে উঠছে।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য এবং সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে সংবাদ প্রচার করেছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করেছে– উত্তরে তৌফিক হোসেন বলেন, প্রতিবেদনটি দেখার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি ভূমিকা নেবে, বলা যাবে।
জেনেভায় আইন উপদেষ্টা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেনেভা মিশনে খুবই অনাকাঙিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় জড়িত দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দূতাবাসের লেবার উইংয়ের যে কর্মকর্তা রয়েছেন তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। স্থানীয় সদস্যকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সবগুলো বাংলাদেশ মিশনে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে প্রটোকল এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।