ভারতের ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
বুধবার রাত ৯ টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বক্তাদের ভাষ্য, ভারত ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় তারা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি জানান।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের হাসিব আল ইসলাম বলেন, “ভারত তার আগ্রাসনের কারণে প্রতিবেশী নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আধিপত্য চললে বাংলাদেশের জনগণও আপনাদের প্রত্যাখ্যান করবে।”
তিনি বলেন, “বন্ধুত্ব হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে, সমতার ভিত্তিতে, প্রভুত্বের ভিত্তিতে নয়।”
ভারতের সঙ্গে হওয়া ‘অসম চুক্তি’ বাতিলের দাবি করে হাসিব ভারতের উদ্দেশে বলেন, “বন্দি বিনিময় চুক্তির কারণে ‘ফ্যাসিস্ট’ হাসিনাকে ফেরত দিতে হবে। আপনারা যদি তা রক্ষা না করেন, তাহলে আমরা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করব।“
বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লায় আকস্মিক বন্যা নিয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সুলতানা আক্তার বলেন, “এটা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এটা ভারতের কৃত্রিমভাবে তৈরি করা বন্যা। বাঁধ খুলে তারা আজ উল্লাস করছে। আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, ছাত্র জনতা ছেড়ে দেবে না। সরকারকে বলতে চাই, আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের ন্যায্য হিস্যা আমাদের পেতে হবে।”
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে এবি জুবায়ের বলেন, “ত্রিপুরা রাজ্যে ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় কুমিল্লা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী জেলা বন্যা প্লাবিত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪ টি সংযোগ নদী রয়েছে, এর ৩০ টিতে তারা বাঁধ দিয়েছে।
“আন্তজার্তিক নদীতে তারা বাঁধ দিয়েছে। ‘আধিপত্যবাদী’ ভারত গ্রীষ্ম মৌসুমে বাঁধ বন্ধ করে রাখায় আমরা পানি পাই না, কৃষক ফসল ফলাতে পারে না। আর বর্ষা মৌসুমে বাঁধের কারণে পানিতে ডুবে মরতে হয়। আমরা এ দ্বিমুখী নীতি চাই না।…আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, প্রভুত্ব নয়।”
শেখ হাসিনার ভারতের কূটনীতির কারণে ভারত এতদিন ‘আধিপত্য’ চালিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হাসিনাকে ছাত্রজনতা লাল কার্ড দেখিয়েছে, ভারতের আধিপত্যকেও তারা লাল কার্ড দেখাবে।”
ইসলামিক স্টাডিজ ফকির বিন ইসমাইল, “এটা প্রাকৃতিক বন্যা নয়, দিল্লির গুটি চালানো পানি। এটা রাজনৈতিক ইচ্ছাপ্রণোদিত বন্যা।
“ভারত রাজনৈতিক বন্যা চাপিয়ে দিয়েছে আমাদের উপর। ভারতকে বলতে চাই, আপনারা ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবেন না। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে সেভেন সিস্টার্স ভেঙে দেব।”
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে কর্মসূচি শেষ হয়। মিছিলে তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দেয়।
সমাবেশের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দীন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আরাফাত হোসেন ভুঁইয়া, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের রাইহান খান, আরবি বিভাগের সাদিক শিকদার, বাংলা বিভাগের মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদও বক্তব্য রাখেন।