বরগুনার পায়রা নদীর তীরে ভেসে আসা মাথাবিহীন বিশাল আকৃতির তিমিটিকে মাটিচাপা দিয়েছে বনবিভাগ। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পায়রা নদীর তীরে ছোনবুনিয়া নামাক এলাকার সংরক্ষিত বনের মধ্যে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
তবে তিমিসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক বড় মাছের মৃত্যুর কারণ হিসেবে পরিবেশ বিপর্যয়কেই দুষছেন বরগুনার বিভিন্ন সংগঠনের পরিবেশবাদীরা।
এর আগে সোমবার (১ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ওই সংরক্ষিত বনে ভেসে আসা ২৫ ফুট দীর্ঘ তিমিটি দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দা।
এর আগে সরেজমিনে ছোনবুনিয়ার সংরক্ষিত বন এলাকায় দেখা যায়, ভেসে আসা তিমিটি বনের মধ্যে গাছের ফাঁকে আটকে আছে। অবস্থা দেখে ধারণা করা যায় দীর্ঘদিন আগেই গভীর সমুদ্রে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে। পরে ভাসতে ভাসতে বরগুনার পায়রা নদীর তীরে ছোনবুনিয়া নামক এলাকার সংরক্ষিত বনে প্রবেশ করে গাছের মধ্যে আটকে যায় অর্ধগলিত তিমি মাছটি। একে তো বিশাল আকৃতির এ মাছটির মাথার অংশ নেই অপরদিকে পচে গিয়ে পেট ফেটে ভেতরের বিভিন্ন অংশ বাইরে বের হয়ে আসে। এছাড়া মাছটির পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। আর এ কারণেই দ্রুত মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
সংরক্ষিত বনে ভেসে আসা তিমি মাছটি দেখতে এসে ছোনবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা তৈয়ব আলী বলেন, আমার বয়সে এতবড় মাছ আর কোনো সময় দেখিনি। মাছটিকে এখন মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা সবুজ গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকালকে বিকেল ৩টার দিকে বনের মধ্যে তিমি মাছটি দেখতে পাই। তবে মাথা না থাকায় তিমি নাকি অন্য কোনো মাছ তা প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি। পরে বন বিভাগকে জানালে তারা এসে মাছটি বেঁধে রেখে মঙ্গলবার সকালে এসে মাটিচাপা দেওয়ার কাজ শুরু করেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলে গত কয়েক বছরে সমুদ্র থেকে ভেসে এসেছে অসংখ্য তিমি ও ডলফিনের মরদেহ। বিশেষ করে সাগর তীরে এসব মৃত মাছের সংখ্যা বেশি দেখা গেলেও এখন বিভিন্ন নদীর তীরেও ভেসে আসার ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের বরগুনা জেলা শাখার সমন্বায়ক মুশফিক আরিফ বলেন, বরগুনায় এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মৃত তিমি ভেসে এসেছে। তালতলীর জয়ালভাঙা ও নলবুনীয়া নামক এলাকায় এর আগে দুটি মৃত তিমি এসেছিল। সম্প্রতি অনেক বেশি তিমির পাশাপাশি ডলফিনসহ অন্য মাছও মরে উপকূলে ভেসে আসতে দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে আমরা অনেকটাই ধারণা করি পরিবেশের বিপর্যয়।
বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ ও টেংরাগিরি সুরক্ষা কমিটির সমন্বায়ক আরিফুর রহমান বলেন, বরগুনায় যে মাছটি ভেসে এসেছে এটি বড় কোনো জাহাজের সঙ্গে আঘাত লাগার পরে মরে গিয়ে ভেসে নদীর তীরে আসতে পারে। তবে এটি সংরক্ষণ করা গেলে এর হাড়সহ বিভিন্ন অংশই অনেক মূল্যবান।
বরগুনায় ভেসে আসা তিমি মাছটি কোন প্রজাতির এবং কি কারণে মারা যেতে পারে এ বিষয়ে সামুদ্রিক তিমি সহ বিভিন্ন মাছের গবেষণায় কাজ করা ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের মেরিন কনজারভেশন টিমের ফিল্ড কোঅর্ডিনেটর জি এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, পচে যাওয়ার কারণে এটি কোন প্রজাতির তিমি তা এখনো বোঝা যায়নি। তবে আমরা ধারণা করি এটি বেলিন প্রজাতির তিমি। আমরা তিমিকে মাছ বললেও সাধারণত তিমি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা পানির নিচে থেকে নিশ্বাস নিতে পানির উপরে চলে আসে বাচ্চাদেরকেও ঠেলে উপরে উঠিয়ে দেয়, তা নাহলে এরা মারা যাবে। তবে কি কারণে ভেসে আসা তিমিটি মারা গেছে তার সঠিক কারণ জানতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এর ময়নাতদন্ত করতে হবে। আমরা শুধু একটু নমুনা সংগ্রহ করে কোন প্রজাতির তিমি তা জানার চেষ্টা করব।
মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়ে দায়িত্বে থাকা বনবিভাগের বাবুগঞ্জ ক্যাম্পের বিট কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ভেসে আসা মাছটিকে আমরা তিমি মাছ হিসেবে শনাক্ত করেছি। তবে কি কারণে মাছটির মৃত্যু হয়েছে তা জানতে পারিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে গতকালকেই আমরা এখানে এসেছি। তবে ওই সময়ে জোয়ারের পানি থাকায় আমরা কিছুই করতে পারিনি। মাছটি পচে দুর্গন্ধ ছাড়ানোর কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।