সুন্দরবনের বাঘ আবারো লোকালয়ে
আসাদুজ্জামান মিলন, শরণখোলা থেকে
ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের হিংস্্র বাঘ, সাপ ও শুকর শরণখোলার বন সংলগ্ন লোকালয়ে হানা দিচ্ছে । শুক্রবার বিকালে একটি বাঘ ভোলা নদী পাড় হয়ে বন সংলগ্ন দক্ষিন রাজাপুর গ্রামে ঢুকে একটি ছাগল শিকার করে নিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় বন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে । ছাগলটির মালিক ঐ গ্রামের সৌরভ ফরাজী জানান, তার ছাগলটি ভোলা নদীর চরে ঘাস খাচ্ছিল । হঠাৎ সুন্দরবন থেকে একটি বাঘ বেড়িয়ে এসে তার ছাগলটি শিকার করে নিয়ে যায়। ছাগলটি খুজতে গিয়ে সেখানে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে ভয়ে সে বাড়ি ফিরে আসে । দক্ষিন রাজাপুর গ্রামের আছাদ হাওলাদার জানান, সম্প্রতি তাদের গ্রামের সোবাহান হাওলাদারের একটি মহিষ বাঘের আক্রমনের শিকার হয়েছেন। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার উপজেলার কদমতলা গ্রামের সগির মোল্লার খড়ের গাদা থেকে সুন্দরবনের থেকে একটি বিষধর অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে । পরে সাপটি শরণখোলা স্টেশন এলাকার বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে দেয়া হয়। টাইগার টিমের সদস্য আলম হাওলাদার জানান, গত এক বছরে তারা বন সংলগ্ন গ্রামগুলো থেকে নানা প্রজাতির অর্ধশতাধিক হিংস্্র সাপ উদ্ধার করে বন বিভাগের মাধ্যমে শরণখোলার বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে দিয়েছেন। অধিকাংশ সাপ খাবারের সন্ধানে সুন্দরবন থেকে লোকালয় ছুটে আসছে । সাপগুলো গৃহস্থের হাস,মুরগী ও ছাগল শিকার করছে ।পশ্চিম রাজাপুর টগরাবাড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমিন চৌকিদার বলেন, দলে দলে শুকর তাদের গ্রামে ঢুকে কৃষি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি করছে । প্রায় প্রতিদিন ধান ক্ষেত,কলা, কচু ও রবি শষ্যের ক্ষেত তছনছ করে দিচ্ছে বন্য শুকরের দল ।শরণখোলা সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ফরিদ খান মিন্টু বলেন, ভোলা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের বন্যপ্রানী সহজেই লোকালয় চলে আসছে। বাড়ছে মানুষ ও বন্যপ্রানীর সংঘাত। সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য জরুরী ভিত্তিতে ভোলা নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । বাঘের সংখ্যা বাড়লে তার উপদ্রবে হরিন বা শুকর নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে পথ ভুলে লোকালয়ে ছুটে আসতে পারে । তবে সহজেই যাতে বন্যপ্রানীর লোকালয়ে আসতে না পারে তার জন্য শীঘ্রই ভোলা নদী খনন করা হবে। ইতিমধ্যে সুরক্ষা নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভোলা নদী খননের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে। আগামী বছর কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি । তিনি আরো বলেন, সরকারী বেসরকারী নানা উদ্যোগের ফলে বন্যপ্রানীর প্রতি বন সংলগ্ন এলাকার মানুষের মনোভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। আগে মানুষ বন্যপ্রানী পিটিয়ে মেরে ফেলে আনন্দ লাভ করতো। এখন তারা বন্যপ্রানী পেলে তা বনে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আন্তরিক ভাবে বনবিভাগ কে সহায়তা করে। বন রক্ষায় এটা আমাদের জন্য একটা বড় অর্জন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- আলি আবরার । নিরালা, খুলনা থেকে প্রকাশিত