করোনাভাইরাসে বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির নাম যুক্তরাষ্ট্র। মোট সংক্রমণ ও মোট মৃত্যু, দুই ক্ষেত্রেই পৃথিবীতে প্রথম অবস্থানে রয়েছে দেশটি। তবে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দ্রুত ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে ক্রমেই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত হয়ে উঠছেন আমেরিকানরা। গত বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমবারের মতো দৈনিক গড় মৃত্যু ৩০০’র নিচে নেমে এসেছে।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দৈনিক গড় মৃত্যু ২৯৩। সর্বোচ্চ দৈনিক গড় মৃত্যু হয়েছিল গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, ৩৪০০ পর্যন্ত। সংক্রমণ পরিস্থিতিতেও এসেছে ব্যাপক উন্নতি। দেশটিতে দৈনিক গড় সংক্রমণ এখন প্রায় ১১ হাজার ৪০০। গড় সংক্রমণও সর্বোচ্চ হয়েছিল জানুয়ারিতে, ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগে ব্যাপক সাফল্যই পরিস্থিতি উন্নতির পেছনে মূল কারণ। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ কোটি আমেরিকান ভ্যাকসিনের দুই ডোজই নিয়েছেন।
মোট জনসংখ্যার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ শতাংশ জনগণ করোনা ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নিয়েছেন। এছাড়া ৫৩ শতাংশের বেশি জনগণ নিয়েছেন ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ। সোমবার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এ তথ্য জানিয়েছে।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর তৃতীয় কারণ ছিল করোনাভাইরাস। হৃদরোগ ও ক্যান্সারের পরেই ছিল এর অবস্থান। তবে সিডিসি বলছে, বর্তমানে করোনার চেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে দুর্ঘটনা, হৃদরোগ, স্ট্রোক অথবা আলঝেইমারের কারণে।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু ৬ লাখ ১ হাজারের বেশি। আর সারাবিশ্বে মোট মৃত্যু প্রায় ৩৯ লাখ। তবে দুই ক্ষেত্রেই প্রকৃত সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে বলেই ধারণা করা হয়।
নিজ দেশে সফলভাবে ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালালেও বহির্বিশ্বের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি রাখতে পারেননি জো বাইডেন। জুনের শেষ নাগাদ সারা বিশ্বে ৮ কোটি ভ্যাকসিন পাঠানোর যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা পূরণ হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অন্যান্য জটিলতার কারণে এটি সম্ভব হয়নি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি ভ্যাকসিনের ডোজগুলো অন্য দেশে পাঠানোকে ‘হারকিউলিসের মতো বিশাল চ্যালেঞ্জ’ বলে উল্লেখ করেন, যা তাদের প্রশাসন পূরণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যা বুঝতে পেরেছি তা হলো সরবরাহ করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নয়, বিশ্বকে দেয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ ডোজ আমাদের রয়েছে, কিন্তু এটি হারকিউলিসের মতো একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।’
গত ১৭ মে বাইডেন ঘোষণা দেন, ‘আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সারাবিশ্বে ৮ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ পাঠাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত যত দেশ ভ্যাকসিন অনুদান দিয়েছে, এটি তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি- যে কোনো দেশের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি- রাশিয়া ও চীন অনুদান দিয়েছে দেড় কোটি ডোজ।’
জুনের শুরুর দিকে বাইডেন আবারও ঘোষণা দেন যে ৮ কোটি ডোজ ছাড়াও ফাইজারের কাছ থেকে ৫০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন নেবে যুক্তরাষ্ট্র, যা সারাবিশ্বে অনুদান দেয়া হবে।