যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলিন্সে পিকআপ ট্রাক হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গত বুধবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে শহরটির বিখ্যাত বারবোন সড়কে ঘটে এ ঘটনা। সেখানে নতুন বছর উদযাপনে অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। হামলাটি চালিয়েছেন শামসুদ্দিন জব্বার নামের ৪২ বছর বয়সী এক সাবেক সেনা। তিনি টেক্সাসের বাসিন্দা। এ ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল বলে ধারনা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ভয়াবহ এ হামলার পর পুলিশের গুলিতে জব্বার নিহত হন।
হামলার পর ট্রাকটিতে তল্লাশি চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের একটি পতাকা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাদের ধারণা, নিষিদ্ধ এ সংগঠনটির সঙ্গে জব্বারের সংশ্লিষ্টতা ছিল। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে হামলায় অন্যরা জড়িত ছিল এমনটি মনে করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি জায়গায় পাইপ বোমা পাওয়া গেছে।
আইএসের পতাকা ছাড়াও ট্রাকটিতে একটি বন্দুকও পাওয়া গেছে। যেটির মধ্যে সাইলেন্সার লাগানো ছিল। হামলাকারী শামসুদ্দিন জব্বার ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনীর মানবসম্পদ ও আইটি বিভাগে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিলেন।
তিনি ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে পড়েন। জব্বার দুইবার বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ২০১২ সালে বিচ্ছেদ হয়। এর পর ২০১৭ সালে পুনরায় বিয়ে করলেও ২০২২ সাল পর্যন্ত টিকেছিল এটি। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি আবাসন ব্যবসা খাতে কাজ করেন। তবে ২০২১ সালে তাঁর এ ব্যবসার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। এর আগে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ ও চুরির অভিযোগে আটক হয়েছিলেন তিনি।
এদিকে আইএসের কাছ থেকে সরাসরি নির্দেশনা পেয়ে নাকি সংগঠনটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জব্বার এ হামলা চালিয়েছেন– সেটি নিরূপণ করার কাজ চলছে। সাজ্জান এম গোহেল নামে এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। তিনি বলেছেন, হামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, জব্বার আইএস থেকে সরাসরি নির্দেশনা পেয়ে হামলা করেন।
আইএসের কৌশল হলো, যখন তারা কোনো হামলা চালায় তখন লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ হতাহত যেন করা যায়। এ ক্ষেত্রেও তাই দেখা গেছে। হামলাকারী জব্বার ট্রাকচাপা দিয়ে মানুষকে হত্যার পাশাপাশি গুলিও ছুড়েছেন। যেখানে হামলা চালানো হয়েছে সেখানে সুগার বোলের (আমেরিকান কলেজ ফুটবল) ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। হামলার পর সেটি স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া শহরটিতে সুগার বোলের ম্যাচ ও মার্দি গ্রাস উৎসব হয়। এ উপলক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ জড়ো হয়। আমার ধারণা, অর্থনীতির ওপরও যেন প্রভাব পড়ে এ জন্য এমন সময় হামলাটি চালানো হয়েছে।
হামলাটি বেশ পরিকল্পিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, জব্বার যেভাবে ট্রাকটি গাড়ি চলার রাস্তা থেকে মানুষের হাঁটার পথে নিয়ে গেছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে তিনি সেখানে আগে নজরদারি চালিয়েছেন, এর পর পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। তিনি এই পথ সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং কীভাবে নিরাপত্তা ভেদ করা যাবে সে সম্পর্কেও জানতেন। খবর বিবিসি, সিএনএনের।