আগামীকাল ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ দিনটিই ক্যালেন্ডারের হিসাবে মঙ্গলবার। প্রতি চার বছর পর একটি নির্ধারিত দিনে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরদিন মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়ে আসছে। ১৮৪৫ সাল থেকে এই ভোটের রীতি চালু আছে দেশটিতে। কিন্তু এই ভোট গ্রহণ কেন নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরদিন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়, এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস।
১৮৪০ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের জন্য কোনো আলাদা দিন নির্ধারিত ছিল না। এ সময় নির্বাচনের তারিখ অঙ্গরাজ্যগুলো ঠিক করত। এতে একেক অঙ্গরাজ্যে একেক দিন ভোট হতো। তবে বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যই ভোট গ্রহণের জন্য নভেম্বর মাসকে বেছে নিত। এতে নানা ধরনের সংকটের সৃষ্টি হতো। এসব সংকট কাটাতে ১৮৪৫ সালে দেশে একটি নির্দিষ্ট দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন পাস হয়। শুরুর দিকে শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ মেনে চললেও পরে সব ধরনের নির্বাচনেই এই আইনের প্রয়োগ শুরু হয়।
শুরুতে ফেডারেল আইনের অধীনে ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচকদের ডিসেম্বরের প্রথম বুধবার পৃথক রাজ্যে মিলিত হওয়ার রীতি ছিল। ১৭৯২ সালের ফেডারেল আইন অনুসারে, রাজ্যগুলোর নির্বাচন (যারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন, এমন নির্বাচকদের ভোট) সেই দিনের আগে ৩৪ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম চালু হয়।
নতুন এই আইনের আগে বিভিন্ন দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। তখন যোগাযোগব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। নির্বাচনের ফলাফলের জন্য কয়েক দিন বা সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো। নিউ জার্সিতে ভোটদানকারী লোকেরা মেইন বা জর্জিয়ার ভোটে কে জিতেছেন, তা জেনে প্রভাবিত হতে পারতেন না। কিন্তু ১৮৪০ সালের দিকে সবকিছু বদলে যেতে লাগল।
রেলপথ নির্মাণের কারণে ডাক ও সংবাদপত্র পরিবহন অনেক দ্রুততর হয়ে ওঠে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যেটা সমাজকে বদলে দিয়েছে, তা হলো টেলিগ্রাফ। কয়েক মিনিটের মধ্যে শহরের যেকোনো খবর পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠল। এর ফলে একটি রাজ্যের নির্বাচনের ফল অন্য রাজ্যের ভোটকে প্রভাবিত করতে শুরু করল।
এতে একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। ভোটাররা রাজ্য থেকে রাজ্যে ভ্রমণ করে একাধিক নির্বাচনে অংশ নিতে শুরু করেন। নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ১৮৪০ দশকের শুরুর দিকে কংগ্রেস সারা দেশে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য একটি একক দিন নির্ধারণ করে।
প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবার কেন ভোট গ্রহণ হয়?
১৮৪৫ সালে কংগ্রেস আইন পাস করে যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রতি চার বছর পর নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পর প্রথম মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম সোমবারের পর প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মানে ভোট কখনোই ১ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে না। কারণ, ১ নভেম্বর খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা ‘অল সেইন্টস ডে’ পালন করে। এটি ক্যাথলিক অনুসারীদের একটি পবিত্র দিন। এ ছাড়া ওই দিন ব্যবসায়ীরা আগের মাসের হিসাব মেলানোর কাজ করেন। দিনটি ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক কর্মচঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ। এদিন ভোটগ্রহণ হলে ব্যবসার ক্ষতি হবে ভেবে তা বাদ দেওয়া হয়। নতুন এই আইনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৪৮ সালের ৭ নভেম্বর।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দুই দিন বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই তা বাতিল করা হয়। কারণ, অধিকাংশ আমেরিকানই রোববারকে উপাসনার দিন হিসেবে আলাদা করে রাখেন। অনেক স্থানে বুধবার ছিল বাজারের দিন। এদিন কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে শহরে বিক্রি করতে যান। এ ছাড়া গ্রামীণ এলাকায় নিকটতম ভোটকেন্দ্র কয়েক মাইল দূরে থাকত। সেখানে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যেত। তাই, ভ্রমণের জন্য রোববার ও বুধবার এড়িয়ে সোমবার করা হয়। যাতে তারা নির্বিঘ্নে মঙ্গলবারে ভোট দিতে পারেন।
এর পর থেকেই চার বছর পরপর নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জন্য ভোট দেওয়ার দিনের ঐতিহ্য ১৮৪৮ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার লড়াই।