সাকিবুর রহমান নিশাদ
গত বছরে রমজানে খুলনার বাজারে অস্থিতিশীল ছিল ভোগ্যপণ্যের দাম। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দামে অস্থির ছিলেন ক্রেতারা। কিন্তু চলতি পবিত্র মাহে রমজানে এসে সেই অগ্নিমূল্যের প্রায় অর্ধেকে নেমেছে পণ্যের দাম। এখন স্থিতিশীল পণ্যের বাজারে রোজাদারদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। একইসঙ্গে অধিক পরিমাণে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করতে খুচরা ব্যবসায়ীরাও খুশি।
সোমবার সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোগ্যপণ্যের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। এখানে ব্যাপক পরিমাণ আমদানি থাকায় দাম রয়েছে স্বাভাবিক। আর চাহিদা মতো ক্রেতারা কিনছেন সবজিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর রমজান মাসে শাক-সবজি ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের চাহিদা থাকে দ্বিগুণ। চাহিদার সংঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দামও। কিন্ত চলতি রমজানে সেই দামের প্রভাব পড়েনি। বাজারে ব্যাপক সরবরাহ থাকায় দাম রয়েছে অনেকটা কম।
নগরীর গল্লামারি বাজারে প্রকার ভেদে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ১৫ টাকা, বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা, শিম ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩ টাকা, ফুলকপি ১০ টাকা, ঢেড়স ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গাজর ২০ টাকা, পেঁপেঁ ১৫ টাকা, লাউ ১০ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, শসা ২০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা, আদা ১২০ টাকা, রসুন ৭০ টাকা, ব্রয়লার মাংস ১৭০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, চিনি ১২০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ টাকা কেজি ও ব্রয়লার ডিম ১০ টাকা পিস দামে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকার আশপাশে হচ্ছে। শসা কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, রোজার আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। এছাড়া গরু-ছাগলের গোশত ও মাছের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। যা সবজিতে গত বছর কেজিতে দাম ছিল দ্বিগুণ।
কাঁচা বাজারে প্রতিকেজি করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭০ টাকা, পটল ১১০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শীতকালীন সিম ৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, খিরাই ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, প্রতিহালি কাঁচকলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ আড়াই কেজি ১০০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, আলু চার কেজি একশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে ভ্রাম্যমাণ অনেক পেয়াজ ব্যবসায়ীকে ৪ কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে, চালের বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫৪ টাকা, আঠাশ বালাম ৬৫ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৭৫ টাকা, মিনিকেট নিম্নমানের ৬৫ টাকা, বাসমতি ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা, কালোজিরা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে অন্যতম প্রয়োজনীয় জিনিস ভোজ্যতেল। বোতলজাত ফ্রেশ, তীর, বসুন্ধরা সয়াবিন (৫লিটার) বিক্রি হচ্ছে ৮৭৫ টাকা দরে। যা লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। লুজ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা দরে। তবে বেশিরভাগ দোকানেই বোতলজাত সয়াবিনের দেখা মিলছে না। এছাড়া খুচরা বাজার প্রতিকেজি মশুর ডাল (সরু) ১৪০ টাকা, মশুর ডাল (মোটা) ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, বড় বাজার, গল্লামারি বাজার, বয়রা বাজার ঘুরে দেখা যায় যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় এবং লেয়ার মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে গরুর মাংস কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।
গল্লামারি কাচাবাজারে আসা ক্রেতা মোহাম্মদ জুনায়েদ বলেন, “সবজির দাম হঠাত বৃদ্ধি পেয়েছিলো রোজার শুরুতে। চাল, ডাল, তেল, মুরগিসহ বেশকিছু পণ্য ও জিনিস বিক্রি হচ্ছে তূলনামূলক কমে। রমজানের শুরুতে কিছুটা বেশি থাকলেও তা এখন আর নেই”।
বয়রা বাজারে আসা কলেজ শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সবজির দাম বাড়তির দিকে ছিলো। চাল, ডাল, সয়াবিন তেলের দাম খুব বেশি না কমলেও অন্যবারের তুলনায় যথেষ্ট নাগালের মধ্যেই আছে।”
তাপস মণ্ডল নামে এক ক্রেতা বলেন, “রমজানে অন্তত আমরা আশা করি সবকিছুর দাম কিছুটা কম থাকবে কিন্তু বাস্তবে তা হয় উল্টো অন্যবার। তবে এবার ব্যতিক্রম দেখছি।”
গল্লামারি বাজারের হাস-মুরগি বিক্রেতা গাজি সানোয়ার বলেন, “খামার থেকে মুরগি কম সরবরাহ হওয়ার কারণে রোজার শুরুতে দাম একটু বাড়তির দিকে ছিল। তবে এখন আবার কমেছে’’।
বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর ভোগ্যপণ্যের সহনশীল দামে পবিত্র মাহে রমজানে বেশ স্বস্তিতে আছেন বলে জানালেন ইকরামুল নামের এক ব্যক্তি।
তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শাক-সবজির দাম অনেকটা কম রয়েছে। এতে করে ক্রেতারা চাহিদা মোতাবেক কিনছেন। ফলে বিক্রি ও লাভ থাকছে বেশী।
মসলা, ছোলা, চিনি ও ডাল বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এতে ভোক্তারা নির্বিঘ্নে কিনতে পারছেন বলে জানালেন বড় বাজারের মুদির দোকানী আব্দুল হাকিম গাজী।
পুরো রমজানে দ্রব্যমূল্যের অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণে খুশি ক্রেতারা। বাকি রোজার দিনগুলোও সবকিছু সহনশীল পর্যায়ে থাকবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।