শুরুতে বিএনপির রাজনীতি করে ঠিকাদারি পেশায় ডালপালা মেলেন এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। পরে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা বলেও পরিচয় দেন। যদিও আওয়ামী লীগের কোনো পদেই তিনি ছিলেন না। আবার তার ভাই জাতীয় পার্টির নেতা। রাজনীতির নানা পর্যায়ে নিজেকে বিস্তৃত করার পাশাপাশি ঠিকাদারি পেশাটাকে ধরেছিলেন বেশ শক্ত করে। নানাভাবে আয় করেছেন অর্থ।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক জি কে শামীম। সরকারের শুদ্ধি অভিযানের সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, এফডিআর, মদ ও অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন তিনি। তার সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তার সাতজন দেহরক্ষীকেও।
পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচার আইনে তিনটি মামলা হয়। মামলার এজাহারে শামীমকে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক ও জুয়ার ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই বছরের অক্টোবরে জি কে শামীমের সম্পদের হিসেব প্রকাশ করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। সংস্থাটির তথ্য মতে, এই ঠিকাদারের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা।
এর আগ পর্যন্ত নিজের গণ্ডির বাইরে তেমন পরিচিত ছিলেন না জি কে শামীম। তবে তার অবৈধ সম্পদের পাহাড় তাকে জনে জনে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এরপর ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক অস্ত্র মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলার বিচার চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে ১০ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আমিনুল ইসলাম জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছেন মর্মে ডকুমেন্ট দেখালেও তা যাচাইয়ে তার সঠিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ওই অস্ত্রের নকল কাগজপত্র নিয়ে ২০১৭ সালে প্রথমে এস.এম বিল্ডার্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। পরে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আসামি জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যোগদান করে কাজ করে আসছিলেন। তিনি মূলত অবৈধ অস্ত্রটি ৭০ হাজার টাকায় কিনে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করেন।
এছাড়া অন্যান্য আসামিরা নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও তারা শর্ত ভঙ্গ করে অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসা করে স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।
রাজধানীর গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের মামলায় জি কে শামীম ও তার সাতজন দেহরক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- জি কে শামীমের সহযোগী সাত দেহরক্ষী মো. জাহিদুল ইসালাম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. মুরাদ হোসেন।
