চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের খাতানের বিলের কাছে বৈদ্যুতিক মোটরচালিত ভ্যানের গতিরোধ করে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। পরে তারা পালানোর সময় ভুক্তোভোগীদের চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা ধাওয়া করে। এ সময় দৌড়ে প্রায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পর দুই ভাই আলমগীর ও ইয়াকুব পুকুর সাঁতরে পার হয়ে আমগাছে উঠে পড়ে। তবে টর্চলাইট নিচে পড়ে থাকতে দেখে তাদের গাছ থেকে নামানো হয়। পরে শিবগঞ্জ-ভোলাহাট সড়কের ছোট জামবাড়িয়া সড়কের ওপর পিটিয়ে হত্যা করা হয় দুই ভাইকে।
তাদের দুই সহযোগী পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ ঘটনার পর ছিনতাই মামলার আসামি করা হয়েছে নিহত দু’জনকে। তাদের ভাষ্য, সন্ধ্যা হলেই ভোলাহাটের কয়েকটি সড়কে ডাকাতের কবলে পড়তে হয় পথচারীদের। পুলিশ বা প্রশাসনকে বারবার বলেও এর সুরাহা হয়নি। বুধবার রাতে তাদের ক্ষোভের কারণে দুই ভাইকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দুর্গাপুর কামারটোলা গ্রামে হাবিবুর রহমান হবুর দুই সন্তান আলমগীর ও ইয়াকুবকে হারিয়ে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যরা এমন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। পরিবারের আরেক ছেলে আমিনুল গত বছর ভারতে গরু চোরাচালানির অভিযোগে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারায়। তাদের বসতবাড়ি ছাড়া কোনো জায়গাজমি না থাকায় দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলত বলে জানা গেছে।
অভাবের সংসারে তারা কখন যে অপকর্মে জড়িয়েছে, তা বলতে পারেননি বাবা হাবিবুর। তিনি বলেন, কষ্টে দিন কাটলেও তাঁর ছেলেরা খারাপ পথে রয়েছে, এমন ধারণা ছিল না। হয়তো অভাবের তাড়নায় দুষ্ট লোকের খপ্পরে পড়ে এমন কাজ করতে পারে। তাই বলে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করবে? তিনি দুই ছেলে হত্যার বিচার চান।
নিহত ইয়াকুবের স্ত্রী সমিজা খাতুনের ভাষ্য, রাতে তাঁর স্বামীকে এলাকার লোকজন ডেকে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। যদি ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, তাহলে তাঁকে কেন পুলিশে দিল না? দেশের আইনে বিচার হবে। তিনি বলেন, ‘সাত বছরের সন্তানকে নিয়ে কীভাবে সংসার চালাব?’ দুই ভাইয়ের মা রুনি বেগমের প্রশ্ন, ‘আমরা গরিব বলে কি বিচার পাব না?’
স্থানীয় বাসিন্দা লুটু জানান, গাছ থেকে নামিয়ে সড়কের ওপর ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা পেটাতে থাকলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুই ভাই। এর আগেও একজন এভাবে মারা গেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। নয়ন আলী বলেন, রহনপুর, কানসাট– কোনো দিক থেকেই সন্ধ্যার পর ভোলাহাটে প্রবেশ করা যায় না। রোগীকেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া যায় না চিকিৎসার জন্য।
মানুষের নিরাপত্তা না থাকায় এলাকাবাসী আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে বলে মত জামবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আলী ঈমামের। পুলিশ তিনটি রাস্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি, গত ১০ বছরে ভোলাহাটের বিভিন্ন সড়কে দুই শতাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। জামবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফাজ উদ্দিন পানু বলেন, কয়েকদিন পরপরই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। জনমানবহীন সড়ক ও বিস্তৃত আমবাগান তাদের কাজ সহজ করে দেয়। ঘটনার খবর পেয়ে দু’জনকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ
হন তিনি।
এ বিষয়ে ভোলাহাট থানার ওসি মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ইচ্ছা থাকলেও লোকবল ও যানবহনের সীমাবদ্ধতার কারণে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় ভুক্তোভোগী এক নারী ছিনতাই মামলা করেছেন। এতে নিহত দু’জনসহ পালিয়ে যাওয়া দু’জনকেও আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও তদন্ত করা হচ্ছে। নিহত আলমগীরের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা আছে।
Leave a comment