গাজীপুরে ব্যবসায়ী সবুজ সরকারকে বিনা অপরাধে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে হেনস্তার অভিযোগ ওঠা শ্রীপুর উপজেলার মাওনার চকপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আব্দুল কুদ্দুসকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এসআই কুদ্দুসকে চকপাড়া ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী যাবের সাদেক জানান, এসআই কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে পুলিশের একটি দল অনুসন্ধান করছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
পুলিশ সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন শ্রীপুর থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন কুদ্দুস। প্রায় আড়াই মাস আগে তাঁকে চকপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এই অল্প সময়ে এলাকার মানুষকে তিনি অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা অভিযোগ করেন, মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই ধরে এনে অর্থ আদায় করেছেন কুদ্দুস। গ্রেপ্তার করে মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করেছেন টাকা। না দিলেই গ্রেপ্তার করে যে কোনো হত্যা মামলায় চালান দেওয়া হবে বলে ভয় দেখাতেন। এই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় একটি চক্রও এসআই কুদ্দুসকে সহযোগিতা করেছে।
সবশেষ গত শনিবার শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর হানু মার্কেট এলাকা থেকে ব্যবসায়ী সবুজ সরকারকে আটক করেন এসআই আব্দুল কুদ্দুস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন কনস্টেবল। সবুজ সরকারকে আটকের পর পরানো হয় হাতকড়া। সবুজের অভিযোগ, এসআই কুদ্দুস ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেন। পরে সবুজকে চকপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে খুঁটির সঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় ঘণ্টাখানেক আটকে রাখা হয়। কৌশলে সবুজ তাঁর মোবাইল সেটটি পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে হাতকড়ার একটি সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করলে শুরু হয় তোলপাড়। এর পরই পুলিশ ছেড়ে দেয় সবুজকে।
সবুজ সরকার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির ক্যাপশনে লেখেন, ‘আমাকে কী কারণে হাতকড়া পরানো হলো? আবার ছেড়ে দিল? সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা মামলা ব্যতীত কাউকে হাতকড়া বা গ্রেপ্তার করার নিয়ম নেই। কাউকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করা হলে নিয়ম অনুযায়ী তাকে কোর্টে চালান করতে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। তা না করে কোনো মুচলেকা ব্যতীত এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া হলো কেন?’
সব অভিযোগ অস্বীকার করে রোববার এসআই কুদ্দুস বলেছেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি এক বিন্দুও সত্য নয়। আমি যদি টাকা নিয়ে থাকি, তাহলে মরলে যেন আমার লাশ কবরে না নামে। সবুজকে আটক করা হয়েছিল এটা সত্য। ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ফাঁড়িতে নেওয়া হয়নি। ওই এলাকায় জমি-সংক্রান্ত দুই পক্ষের ঝামেলা হচ্ছিল। আইনশৃঙ্খলা অবনতির শঙ্কায় তাঁকে আটক করা হয়। সবুজরা তিন ভাই। তাদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে আজ সবুজ সরকার বলেন, আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এসআই কুদ্দুস তাঁর এক লোক দিয়ে আমার মায়ের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। সোমবার দুপুরে এ বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আমিনুল ইসলাম বলেন, পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে ব্যবসায়ী সবুজকে। যত ধরনের সহযোগিতা দরকার, পুলিশ তাঁকে দেবে।