জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় চাঁদপুরের বিতর্কিত চেয়ারম্যান সেলিম খানকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের বিতর্কিত চেয়ারম্যান সেলিম খানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পাশাপাশি চার সপ্তাহ পর তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
ওইদিন আদালতে সেলিম খানের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির। অপরদিকে দুদকের পক্ষ ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
এর আগে ১৪ আগস্ট ৩৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তিন সপ্তাহের মধ্যে চাঁদপুরের বিতর্কিত চেয়ারম্যান সেলিম খানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত।
গত ১ আগস্ট সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৩৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে চাঁদপুর সদরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়।
জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্পদ বিবরণী চায় দুদক। সেলিম খান ৬৬ লাখ টাকার সম্পদের হিসাব জমা দেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে তার ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অনুসন্ধান কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন সভায় সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সেলিম খানের ইউনিয়নে মেঘনা পাড়ে একটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান সেলিম খান, তার ছেলেমেয়েসহ অন্যান্য জমির মালিকরা অস্বাভাবিক মূল্যে দলিল তৈরি করেছেন। ফলে ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা।
জমির অস্বাভাবিক মূল্য নিয়ে জেলা প্রশাসকের তদন্তে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করার পরিকল্পনা ধরা পড়ে যায়। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক। যা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এর আগে চাঁদপুর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন করায় চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন।
কয়েক বছর ধরে চাঁদপুরের নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ওই চেয়ারম্যানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এমনকি অনুমতি ছাড়াই চেয়ারম্যান বছরের পর বছর বালু বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সবশেষ ৬ এপ্রিল সেলিম খানের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। অভিযানে তার বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক টিম।


