খুলনা নগরীতে সম্প্রতি আলোচিত দুই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। স্ত্রীর পরকীয়ায় বাঁধ সাধায় খুন হন বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বিক্রয় প্রতিনিধি আলামিন ইমন। অপরটি নগরীর দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্দ্বে জেরে হত্যা করা হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসনের ছাত্র অর্ণব কুমারকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কুতুব উদ্দিন।
বেসরকারি মোবাইল অপারেটর বিক্রয় প্রতিনিধি আল আমিন ইমন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের বলি হন তিনি। স্ত্রী লামিয়া ইসলাম সুমি পরকীয়া প্রেমে আসক্ত ছিলেন। নগরীর বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহার সাথে নিহতের স্ত্রী লামিয়া ইসলাম সুমির পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ইমন ঘটনাটি জেনে ফেলে এবং বিশ্বজিৎ সাহাকে কড়া ভাষায় ফোন করে গালিগালাজ করে। ইমনকে শায়েস্তা করার জন্য বিশ্বজিৎ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বজিৎ তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পূর্বের কর্মচারী নাইম ও মুন্সিকে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া করে।
কুতুব উদ্দিন বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে নাইম ও মুন্সি ট্রাক স্ট্যান্ড রোড কাঁচা বাজারের সামনে উপস্থিত হয়। এ সময় মোটরসাইকেল চালিয়ে সোনাডাঙ্গার ২২তলার সামনে পৌঁছালে বিশ্বজিৎ সাহা হত্যাকারীদের আলামিন ইমনকে চিনিয়ে দেয়। মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় সন্ত্রাসীরা ইমনের পেটের বাম পাশে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহতের বড় ভাই রাজিবুল ইসলাম বাদি হয়ে থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইমন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বিশ্বজিৎ সাহাকে পূর্ব রূপসা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ জানিয়ে বিশ্বজিৎ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। গ্রেপ্তার বিশ্বজিৎ সাহা নগরীর পূর্ব বানিয়াখামার লোহারগেট এলাকার বাসিন্দা।
অর্ণব সরকার হত্যা সম্পর্কে এই পুলিশ কমিশনার বলেন, নগরীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী পলাশ এবং কালা লাভলুর সহযোগী ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসনের ছাত্র অর্ণব। খুব ছোট বেলা থেকে তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্ক তার জীবনে বড় কাল হয়ে দাঁড়ায়। গ্রেনেড বাবুর সদস্যরা তাকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে ইনসান শরীফের কাছ থেকে একটি ওয়ান শ্যুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, অন্যান্য আসামিদের মধ্যে শাহারিয়ার সজল ও মাহিন হোসেন শুভ অর্ণব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। বাকি আসামিরা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও আদালতে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা এড়িয়ে যায়। দু’টি গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে অর্ণব খুন হন বলে আসামিরা স্বীকার করেছেন।
এ হত্যা মামলায় গোলাম রাব্বানির বিষয়টি জানতে চাইলে কুতুব উদ্দিন বলেন, রাব্বানির ডাকে সাড়া দিয়ে অর্ণব শেখপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে আসে। অর্ণব আসা মাত্র সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে এবং পরবর্তীতে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে।
ইনসানের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওয়ান শুটারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে তাকে ওই অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে কি না?