ইউক্রেনের সামরিক-শিল্প কারখানা এবং বিভিন্ন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে কিনজাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে ৩১টি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
নভেম্বরের ১৬ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত এসব হামলা চালায় রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর রুশ বার্তাসংস্থা তাসের।
রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর হামলার নিশানায় ছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী, সামরিক বিমানঘাঁটির অবকাঠামো ও সেনা সমাবেশের স্থানগুলো। এছাড়াও ড্রোন, অস্ত্রাগার, গোলাবারুদ, জ্বালানি ডিপো, ইউক্রেনীয় সেনা ইউনিট এবং বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের অস্থায়ী স্থাপনাতেও হামলা চালিয়েছে তারা।
ইউক্রেনের সঙ্গে মস্কোর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম অধিক শক্তিশালী এবং কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারা এ ধরনের অস্ত্র এই প্রথম ব্যবহার করেছে রাশিয়া।
কিয়েভের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়াতে হামলার চালানোর পর মস্কো এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু সতর্কতা সত্ত্বেও এ অস্ত্র ব্যবহার করায় গত ৩৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধ নতুন মোড় নেবে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, ডিনিপ্রোর কেন্দ্রীয় পূর্বাঞ্চলীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং বাণিজ্যিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে কিছু জানায়নি বিমানবাহিনী। তবে আঞ্চলিক গভর্নর সেহরি লাইসাক বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাণিজ্যিক এলাকায় আগুন ধরে গেছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে দুইজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া রাশিয়া কিনজাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাতটি কেএইচ-১০১ ক্রুইস ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জনিয়েছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাদের কাছে শক্তিশালী নতুন প্রযুক্তির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ রয়েছে। আর এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) অপ্রত্যাশিত এক টিভি ভাষণে তিনি ক্ষেপণাস্ত্রটির আরও পরীক্ষা চালানোর কথা বলেছেন। রাশিয়া ইউক্রেনের নিপ্রো শহরে নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপের একদিন পরই এমন বক্তব্য দিলেন রুশ নেতা।
ইউক্রেন প্রথমবারের মতো মার্কিন ও ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর পর, রাশিয়ার এই ওরেশনিক মিসাইলের ব্যবহার সেই সপ্তাহে যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। শুক্রবারের ভাষণে রুশ নেতা আরও বলেন, ‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো সম্ভব নয়। ওরেশনিক হাইপারসনিক মিসাইল শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ বেশি দ্রুত চলে। পুতিন একে উৎপাদনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনের স্টর্ম শ্যাডো এবং আটাকামস মিসাইল ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তারা। প্রথমে একে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) মনে করা হলেও পরে মস্কো জানিয়েছে, সেটি নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রও আইসিবিএমের মতো পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে বলে জানিয়েছেন পুতিন।
পুতিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম ‘ওরেশনিক’। এটি মধ্যপাল্লার একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ভাষ্যমতে, সেটি ছিল মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।